পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বঙ্গাধিকারী
৬১

উপক্রম হইয়াছিল, সেই সময়ে মুর্শিদকুলী খাঁ বাঙ্গলার নবাবীপদ লাভ করিয়া মোগলসম্রাটের ক্ষমতাহীনতাযুক্ত নিজের প্রভুত্ব বিস্তার করিতে থাকেন। ঐতিহাসিকেরা বলেন যে, দর্পনারায়ণ তাহার কথা অমান্য করায়, তদবধি দর্পনারায়ণের প্রতি মুশিদকুলীর ঘোর বিদ্বেষ জন্মে। এই সময়ে খালসা বা রাজবিভাগের পেস্কার ভূপতি রায়ের মৃত্যু হয়। তাঁহার পুত্র গোলাপ রায় অনুপযুক্ত থাকায় নবাব দর্পনারায়ণকে খালসার পেস্কারী পদ প্রদান করেন। রাজস্ববিষয়ে দর্পনারায়ণের অত্যন্ত অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি বাঙ্গলার আয় ১ কোটি ৩০ লক্ষ হইতে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা করিয়াছিলেন। এই সমস্ত আয়বৃদ্ধির জন্য তাহাকে জমিদারদিগের বৃত্তির ও সরকারী কর্মচারিগণের গুপ্ত লাভের প্রতিও কিয়ৎপরিমাণে হস্তক্ষেপ করিতে হইয়াছিল। তজ্জন্য তিনি সেই সমস্ত লোকদিগের অপ্রিয় হইয়া উঠেন। তাহাদের অসন্তোষের কথা অবগত হইয়া কুলী খা ঁতাহার এত দিনের সঞ্চিত বিদ্বেষের প্রতিশোধ লইবার জন্য দর্পনারায়ণের হিসাবপত্র পরিদর্শনের ছলে তাহাকে বন্দী করিয়া রাখেন এবং তাহাকে যাবতীয় সুখভোগ হইতে বঞ্চিত করায় ক্রমে ক্রমে স্বাস্থ্যভঙ্গ হওয়ায়, দর্পনারায়ণ মৃত্যুমুখে পতিত হন।[]

 যদি ঐতিহাসিকগণের বিবরণে বিশ্বাস স্থাপন করিতে হয়, তাহা হইলে ইহা যে মুর্শিদকুলী খাঁর চরিত্রের একটি ভীষণ কলঙ্ক, তদ্বিষয়ে সন্দেই নাই। মুর্শিদকুলী খাঁর ন্যায় ন্যায়পর নবাব যে এইরূপ ঘৃণিত কার্য করিয়াছিলেন, ইহা বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি হয় না। দর্পনারায়ণের পর, নবাব সুজা উদ্দীনের সময় তাহার পুত্র শিবনারায়ণ তাহার স্থলে কাননগো পদে নিযুক্ত হন, এবং তিনি রুকুনপুর নামক বিস্তৃত জমিদারীও প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। দর্পনারায়ণ ডাহাপাড়ায় বাসবাটী নির্মাণ করেন। যদিও এক্ষণে বঙ্গাধিকারিগণের পুনর্বার নূতন বাটী নির্মিত হইয়াছে, তথাপি সেই পুরাতন বাটীর চিহ্ন এখনও স্থানে স্থানে বর্তমান আছে। দর্পনারায়ণ ডাহাপাড়ায় আসিয়া কিরীটেশ্বরীর সেবার যথেষ্ট বন্দোবস্ত করেন। কিরীটেশ্বরী অনেক দিন হইতে তাহাদের হস্তে ছিলেন। দর্পনারায়ণ মন্দিরাদির নির্মাণ ও কালীসাগর নামে পুষ্করিণী খনন করাইয়া দেন। তিনি নিজ নামে একখানি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন।

 পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, দর্পনারায়ণের মৃত্যুর পর শিবনারায়ণকে তাহার স্থলে কাননগো পদে নিযুক্ত করা হয়। হিজরী ১১৩৭ খ্রীঃ অব্দে, সম্রাট মহম্মদশাহ তাহার রাজত্বের অষ্টম বৎসরে শিবনারায়ণকে কাননগোপদের ফার্মান প্রদান করেন। তাহাতে এইরূপ লিখিত আছে যে, দর্পনারায়ণের মৃত্যুর পর তাহার পুত্র শিবনারায়ণের নিকট হইতে দর্পনারায়ণের দেয় অর্থ ২ লক্ষ টাকা নজর লইয়া তাহাকে তাঁহার পিতার

  1. Riyaz-us-salatin, p. 260. দর্পনারায়ণের উক্ত দুর্দশার কথা প্রথমে তারিখ বাঙ্গলায় লিখিত হয়। তৎপরে রিয়াজ ও স্টুয়ার্ট প্রভৃতির গ্রন্থেও উল্লিখিত হইয়াছে।