পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৬৮
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

সরফরাজের যুদ্ধ-প্রসঙ্গে সে কথার উল্লেখ করেন। আলিবর্দী পশ্চিম তীরে অবস্থান করায় এবং প্রথমেই পশ্চিম পারে বুদ্ধ আরম্ভ হওয়ায়, তাঁহারা সেইজন্য কেবলই পশ্চিম পারের কথা লিখিয়াছেন। কিন্তু আলিবর্দীর যুদ্ধও উভয় পারেই হইয়াছিল। আবার আলিবর্দীর যুদ্ধস্থল হইতে মীর কাসেমের যুদ্ধস্থল স্বতন্ত্র। এই সকল স্থানের এক্ষণে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। আমরা দুই যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত মর্ম প্রদান করিয়া কোন কোন স্থানে কিরূপ ভাবে যুদ্ধ হইয়াছিল এবং তাহাদের এক্ষণেই বা কিরূপ পরিবর্তন হইয়াছে, তাহার একটি বিবরণ প্রদান করিতেছি।

 গিরিয়ার প্রথম যুদ্ধ নবাব সরফরাজ খা ঁও আলিবর্দী খাঁর মধ্যে সংঘটিত হয়। নবাব সরফরাজ খাঁকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া আলিবর্দীকে বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার একেশ্বর করিবার জন্য সরফরাজের মন্ত্রী হাজি আহমদ, জগৎশেঠ, ফতেচাঁদ ও রায়রায়ান আলমচাঁদ প্রভৃতি যে-ষড়যন্ত্রের সূচনা করেন, গিরিয়ার যুদ্ধে তাহার অভিনয় শেষ হয় এবং নবাব সরফরাজকে চিরদিনের জন্য মরধাম পরিত্যাগ করিতে হইয়াছিল। আলিবর্দী খী পাটনা হইতে মুর্শিদাবাদাভিমুখে ধাবিত হইয়া রাজমহল, ফরাক্কা ও পরে সূতীর নিকট ভাগীরথীর মোহানার নিকটস্থ শাহমোর্তাজা হিন্দীর সমাধিস্থল হইতে জঙ্গীপুরের নিকট বালিঘাটা পর্যন্ত শিবির সন্নিবেশ করিয়া পিপিন পর্যন্ত অগ্রসর হইয়াছিলেন। নবাব সরফরাজ খ মুর্শিদাবাদ হইতে যাত্রা করিয়া প্রথম দিনে বামনিয়া, দ্বিতীয় দিনে দেওয়ানসরাই ও তৃতীয় দিনে খামরায় উপস্থিত হন।[১] খামরা হইতে নবাব গিরিয়ায় শিবির সন্নিবেশ করেন; কিন্তু তাহার কতক সৈন্য খামরায় অবস্থিতি করিতে থাকে। নবাব গিরিয়ায় উপস্থিত হইলে, তাহার প্রধান সেনাপতি গওস খা ভাগীরথী পার হইয়া প্রায় সূতী পর্যন্ত ধাবিত হন। এই সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধির প্রস্তাব চলিতেছিল; কিন্তু সে সন্ধি কার্যে পরিণত না হওয়ায়, পুনর্বার যুদ্ধাগ্নি প্রজ্বলিত হইয়া উঠে। আলিবর্দী নিজ সৈন্যদিগকে তিন ভাগে বিভক্ত করিয়া একভাগ নন্দলাল নামে একজন বিশ্বস্ত কর্মচারীর অধীনে রাখিয়া অপর দুই দল নিজে লইয়া রাত্রিযোগে নদী পার হইলেন। গওস খাঁর সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য নন্দলালের প্রতি আদেশ ছিল এবং তিনি নিজে সরফরাজের শিবির আক্রমণ করিবার জন্য ধাবিত হন। রিয়াজে লিখিত আছে যে, গওস খা ঁও মীর সরফউদ্দীন গিরিয়ানালার পারে শিবির সন্নিবেশ করিয়াছিলেন।[২] এই গিরিয়ানালার কোন অনুসন্ধান পাওয়া যায় না; মুতাক্ষরীনে লিখিত আছে যে, আলিবর্দী নদীর যে-তীরে শিবির সন্নিবেশ করিয়াছিলেন, সেই তীরে গওস খাঁর সহিত নন্দলালের যুদ্ধ হয়। ইহাতে ভাগীরথীর পশ্চিমতীরই বুঝা যাইতেছে। তাহা হইলে গিরিয়ানাল ভাগীরথীর পমিতীরে হওয়ার সম্ভাবনা। রেনেলের কাশিমবাজার দ্বীপের মানচিত্রে


  1. Riyaz-us-saltain, pp. 310-1.
  2. Riyaz-us-saltain, p. 314.