পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
গিরিয়া
৬৯

গিরিয়া যুদ্ধপ্রান্তরের নিকট একটি নালা ভাগীরথীর পূর্বতীরে দৃষ্ট হয়, তাহা এক্ষণে বালুকাস্তুপ মধ্যে প্রোথিত। কারণ ভাগীরথী পশ্চিম হইতে অনেক পূর্বে সরিয়া আসিয়াছেন। সায়রের কথানুসারে গওস খাঁর অবস্থান পশ্চিম তীরেই বুঝায়।

 প্রভাত হইবামাত্র আলিবর্দী নিজের অধীন দুইদল সৈন্য লইয়া সরফরাজকে সমুখ ও পশ্চাৎ উভয় দিক দিয়া আক্রমণ করিলেন। এদিকে নন্দলালও গও খাঁর সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইল। সরফরাজ হস্তীপৃষ্ঠে বিপদের সম্মুখীন হইলেন। নবাবের হস্তীচালক তাহাকে আসন্ন বিপদ হইতে উদ্ধার করার জন্য রণস্থল হইতে পলায়ন করিতে উদ্যত হইয়াছিল। কিন্তু সরফরাজ তাহাকে তিরস্কার করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেন। অধিক দূর অগ্রসর হইতে না হইতে একটি বন্দুকের গুলি সরফরাজের মস্তিষ্কে প্রবিষ্ট হওয়ায় তিনি হস্তীপৃষ্ঠে শায়িত হন। মুর্শিদাবাদের নবাবদিগের মধ্যে কেবল সরফরাজই সমরক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিয়ছিলেন। হস্তীচালক তাহার মৃতদেহ বহন করিয়া মুর্শিদাবাদে উপস্থিত হইলে, তাহা নেক্টাখালির প্রাসাদে সমাহিত করা হয়। তাহার সমাধি অদ্যাপি বর্তমান আছে।[১] সরফরাজের সহিত আলীবর্দীর যে যুদ্ধ হয়, তাহ৷ গিরিয়া গ্রামের নিকট এবং ভাগীরথীর পূর্ব তীরে। এক্ষণে তাহার কিয়দংশ তাহার গর্ভস্থ হইয়াছে, অবশিষ্টাংশ অদ্যাপি পূর্ব পারেই অবস্থিত রহিয়াছে। গওস খা ঁনন্দলালের সৈন্যদিগকে সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করিয়া ফেলেন; নন্দলালও ইহজীবনের লীলা শেষ করিতে বাধ্য হয়। গওস খা ঁতৎপরে প্রভুর সাহায্যের জন্য গিরিয়াভিমুখে যাত্রা করেন। কতক দূর অগ্রসর হইয়া তিনি জানিতে পারেন যে, তাহার প্রভু বন্দুকের গুলির আঘাতে হস্তিপৃষ্ঠে শায়িত হইয়াছেন। তখন তিনি অনন্যোপায় হইয়া স্বীয় পুত্রদ্বয় মহম্মদ কুতুব ও মহম্মদ পীরকে আহ্বান করিয়া যাহাতে আলিবর্দীকে সম্পূর্ণরূপে বাধাপ্রদান করিতে পারেন, তাহার জন্য পরামর্শ করিলেন।[২] তাঁহারা কাপুরুষের ন্যায় পলায়ন। করা অপেক্ষা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণবিসর্জন করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন এবং আপনাদিগের সৈন্য সমবেত করিতে লাগিলেন; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশই সরফরাজের মৃত্যুশ্রবণে ভগ্নোৎসাহ হইয়া মুর্শিদাবাদ অভিমুখে ধাবিত হইয়াছিল। যাঁহারা অবশিষ্ট ছিল, গওস খা ঁতাহাদিগকে লইয়া হস্তিপূঠে আরোহণপূর্বক আলিবর্দীর সৈন্যসাগর মথিত করিবার জন্য অগ্রসর হইলেন। তাহার বীর পুত্রদ্বয়ও পিতার পথের অনুসরণ করেন। তাহাদের তরবারিচালনে আলিবর্দীর সৈন্যগণ অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিল। গওস খা ঁআলিবর্দীর গোলন্দাজ সেনাপতি ছেদন হাজারীর একটি বন্দুকের গুলিতে আহত

  1. এই নেক্টাখালিকে লেংটাখালিও বলিয়া থাকে; লেংটাখালি শাহানগর থানার পূর্বে। এক্ষণে তা জঙ্গলে পরিপূর্ণ। গভর্নমেন্টের পূর্তবিভাগ কর্তৃক সরফরাজের সমাধির নূতন সংস্কার হইয়াছে।
  2. রিয়াজে মহম্মদ পীরের স্থলে বাবর বলিয়া লেখা আছে। (Riyaz-us-salatin, p. 320)