পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
গিরিয়া
৭৩

সৈন্য দক্ষিণ দিকে বাশাইয়ের নিকট পর্যন্ত অবস্থান করে। ইংরেজ-সৈন্যগণ বাদশাহী সড়ক ধরিয়া আসিয়া, বাঁশলই-এর মোহানার নিকট উক্ত নদী পার হইয়াছিল। সম্ভবত বাঁশলই যেখানে সড়ককে বিভক্ত করিয়াছে, ইংরেজ-সৈন্য সেইখানেই পার হইয়া থাকিবে, যদিও তাহার কিছু পূর্বে এক্ষণে বর্তমান মোহান৷ অবস্থিত এবং প্রাচীন মোহানা আরও পূর্বে ছিল, তথাপি মোহানার নিকট যাওয়ার কোনই প্রয়োজন দেখা যায় না; বর্ষাকালে মোহানার নিকট পার হওয়া বড় সহজ ব্যাপার নহে। মেজর অ্যাডামূসের। সহিত মেজর কার্নাক, নক্স, গ্রান্ট প্রভৃতি সেনাপতিও ছিলেন। ইংরেজ-সৈন্যগণ অগ্রসর হইয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করে। আসদউল্লার সৈন্যগণ ইংরেজদিগের অনেককে বাঁশইয়ের জলে নিক্ষেপ করিয়াছিল। কিন্তু ইংরেজরা অপর পার্শ্বে জয়লাভ করায়, মীর কাসেমের সৈন্যদিগকে অবশেষে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইতে হইয়াছিল। ঐতিহাসিকেরা বলিয়া থাকেন যে, শের আলি যদি কিছু বীর্যবত্তা দেখাইতে পারিত, তাহা হইলে ইংরেজদিগকে বাঁশলই ও ভাগীরথীর গর্ভে চিরবিশ্রাম লাভ করিতে হইত। এই যুদ্ধের পর মীর কাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের আর প্রকৃত যুদ্ধ ঘটে নাই। ইহার পর উদূয়ানালার শিবির আক্রমণ করিয়া ইংরেজরা। মীর কাসেমের সৈন্যগণকে একেবারে বিধ্বস্ত করিয়া ফেলে।

 যে-প্রান্তরে মীর কাসেমের সৈন্যের সহিত ইংরেজদিগের যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তাহার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে, ভাগীরথী তাহাকে গর্ভস্থ করিয়া লালখাঁর দেওয়াড়ে পরিণত করিয়াছেন। সূতীর নিকট কোন্দলিয়া নামে একটি ময়দান আছে। প্রবাদ আছে যে, সেইখানে প্রথমে নবাব ও ইংরেজ সৈন্যের প্রথম যুদ্ধ আরম্ভ হয়। সূতীর নিকট বাজিতপুর নামক স্থানের সর্বেশ্বর দেবের মন্দিরের তীরে একটি যুদ্ধ-চিত্র আছে; সাধারণে বলিয়া থাকে যে, মীর কাসেম ও ইংরেজদিগের যুদ্ধ স্মরণ করিয়া সেই চিত্র অঙ্কিত হইয়াছে। গিরিয়া-প্রান্তরের উভয় যুদ্ধস্থলেরই অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। ভাগীরথী প্রতিবৎসর ভিন্ন ভিন্ন গতি অবলম্বন করায়, ক্রমাগত উক্ত পরিবর্তন ঘটিয়া আসিতেছে। ভাগীরথীর মোহান৷ পূর্বে সূতীর নিকট ছাপঘাটিতে ছিল; এক্ষণে তাহ সূতী হইতে দুই ক্রোশ দক্ষিণ-পূর্বে বিশ্বনাথপুর নামক স্থানে সরিয়া আসিয়াছে। সূতী হইতে প্রায় দেড় ক্রোশ দক্ষিণে আটপলগাছি নামক স্থানের নিকট দিয়া ভাগীরথী প্রবাহিত হইতেন। রেনেলের মানচিত্রে তাহাই দেখিতে পাওয়া যায়। এক্ষণে সেই আটপলগাছি হইতে ভাগীরথী প্রায় দেড় ক্রোশ পূর্বে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। এইরূপে ভাগীরথী গিরিয়া-প্রান্তরকে ছিন্নভিন্ন করিয়া ফেলিয়াছেন; কিন্তু তাহার গতির এইরূপ পরিবর্তনসত্ত্বেও বিশাল গিরিয়া-প্রান্তরের চিহ্ন অদ্যাপি একেবারে বিলুপ্ত হয় নাই। আজিও তাহা বহুদূরব্যাপী ভূভাগে স্বীয় বিশালকায় বিস্তার করিয়া, অষ্টাদশ শতাব্দীর দুইটি প্রসিদ্ধ যুদ্ধের কথা স্মৃতিপটে উদয় করাইয়া দিতেছে।