পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলিবর্দীর বেগম

[]

 যাঁহারা কার্যের পসরা মাথায় লইয়া সংসারক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন এবং যাহাদের জীবন-তরণী অনন্তপ্রবাহ কর্মসাগরে প্রতিনিয়ত ভাসমান হইতে থাকে, তাহাদের ভাগ্যে যদি এক এক জন উপযুক্ত সঙ্গীর মিলন ঘটে, তাহা হইলে সেই সকল কর্মবীরদিগের জীবন তাদৃশ কষ্টকর বোধ হয় না। মহাশ্মশানে শবসাধনের ন্যায় তাঁহারা সংসারের সমস্ত আসাধ্য সাধন করিতে পারেন। যখন ক্লান্তি বা বিভীষিকা আসিয়া হৃদয় আচ্ছন্ন করে, তখনই উত্তরসাধকগণের “মা ভৈষীঃ মা ভৈষী” রব তাহাদের হৃদয়ে আবার শক্তির সঞ্চার করিয়া দেয় এবং উৎসাহের প্রতপ্ত মদিরাপানে তাহার পুনর্বার সিদ্ধিলাভে অগ্রসর হইতে থাকেন। আবার যদি সেই সহায়তা জীবনের চিরসহচরী সহধর্মিণী হইতে লাভ হয়, তাহা হইলে সুখের আর সীমা থাকে না। যিনি গৃহকার্যের সঙ্গিনী, তিনি যদি পার্শ্বে দাঁড়াইয়া দুঃসাধ্য কর্মের সহায়তার জন্য প্রস্তুত হন, তাহা হইলে কে এই সংসার-মহাশ্মশানে শবসাধনে প্রবৃত্ত না হয়? কে-ই বা কর্মমহাপারাবারে আপনার জীবন-তরণী চির-ভাসমান করিতে ইচ্ছা না করে? যাঁহারা। শক্তিস্বরূপিণী, তাঁহারা যদি সেই শক্তি চির-অন্তহিত না রাখিয়া পতিশক্তির সহিত মিলাইয়া দেন, তাহা হইলে, জগতে এমন কোন্ অসাধ্য কর্ম আছে, যাহা সাধিত হইতে না পারে? যেখানে পতিশক্তি ও পত্নীশক্তির পূর্ণবিকাশ ঘটিয়াছে, সেইখানে অভূতপূর্ব ঘটনাসকল সংঘটিত হইয়াছে। জগতে এরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নাই।

 পাশ্চাত্য জগতে কত কত দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও রাজনীতিবিদের জীবনে এই উভয় শক্তির মিলন দেখা গিয়াছে। অনেক ধর্মবীর ও কর্মবীর এই পবিত্র আশীর্বাদ লাভ করিয়াছেন। ভারতরমণী সাধারণতঃ গৃহাধিষ্ঠাত্রী হইলেও, সময়ে কর্মবীর পতিদিগের সহায়তা করিতে বুটি করেন নাই। তাহার পতির সহিত অরণ্যে ও পর্বতে ভ্রমণ করিয়া, তাহাদের দুঃখকষ্টে সঙ্গিনী হইয়াছেন ও তাহাদিগকে কর্তব্যকার্যে “উৎসাহ দিয়া আপনাদিগের পবিত্র নাম চিরপূজ্য করিয়া গিয়াছেন। রামায়ণমহাভারত হইতে রাজস্থানের ইতিবৃত্ত পর্যন্ত অনেক স্থলে এরূপ দৃষ্টান্ত দেখিতে পাওয়া যায়। যাঁহারা সম্রাজ্ঞী পদে বৃত হইতেন, তাঁহারা রাজকার্যেও সময়ে সময়ে পতিকে পরামর্শ প্রদান করিতে লুটি করিতেন না। ভারতরমণীগণ গৃহিণী হইয়াও সচিব ও সখীর ন্যায় কার্য করিয়াছেন। তাই কালিদাসের মধুর কবিতায় তাঁহারা “গৃহিণী সচিব সখী মিথ, প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ” বলিয়া চিত্রিত৷ হইয়াছেন। আর রাজস্থানের ইতিবৃত্তে তাঁহারা যথার্থ শক্তিরূপিণী হইয়া আপনাদিগের মহাশক্তির ক্রীড়া দেখাইয়াছেন এবং স্বদেশ ও স্বধর্মরক্ষার জন্য পতির সহায়তা করিয়া, অবশেষে চিতানলে পবিত্র দেহ ভস্মীভূত করিয়াছেন। যে-মহাপুরুষ

  1. বেগম শরফ-উন-নিসা।