পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
আলিবর্দীর বেগম
৮৫


আলিবর্দীর বেগম হইতেছে দেখিয়া এবং হোসেনকুলী খাঁকেই সেই অধঃপতনের কারণ জানিয়া তিনি তাহার প্রতিবিধানে যত্নবতী হইলেন।

 সিরাজ স্বীয় জননীর কলঙ্কের কথা শুনিয়া অবধি মর্মাহত হইয়াছিলেন এবং হোসেনকুলী খাঁকে প্রতিফল দিবার জন্য প্রতিনিয়ত চিন্তা করিতেছিলেন। নবাববেগম এক্ষণে উপায়ান্তর না দেখিয়া, আপনার সংসারের পরম শত্ন হোসেনকুলী খাঁর বিনাশসাধনের জন্য সিরাজকে উত্তেজিত করিতে লাগিলেন। হলওয়েল সাহেব। নবাব-বেগমকে যে-নিষ্ঠুর কার্যের পরামর্শ হইতে সর্বদা বিরত থাকার কথা উল্লেখ করিয়াছেন, এস্থলে আমরা তাহার অন্যথা দেখিতে পাই। নবাব-বেগম এ বিষয়ে নবাব আলিবর্দী খাঁর সহিত পরামর্শ করিলে, উভয়ের পরামর্শে হোসেনকুলীর প্রাণবধ করাই স্থির হইল। কিন্তু হোসেকুলী খাঁ নওয়াজেস মহম্মদের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র; এজন্য এ বিষয়ে তাহার মত লওয়ার প্রয়োজন হইয়া উঠিল। নবাব-বেগম নিজেই তাহার উপায় করিলেন। নবাব-বেগম হোসেনকুলীর প্রতি ঘসেটীর ক্রোধ জানিতে পারিয়া উক্ত খাঁর বধের জন্য নওয়াজে মহম্মদের মত করিতে ঘসেটীকেই নিযুক্ত করেন।[১] চরিত্রহীনা রমণী যখন স্বীয় প্রণয়পাত্রকে অপরের প্রণয়াকাক্ষী দেখে, তখন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়; এমন কি, ক্রোধ ও হিংসার বশীভূত হইয়৷ সেই প্রণয়পাত্রেরই মৃত্যুকামনা পর্যন্ত করিতে লুটি করে না। বঙ্কিমচন্দ্রের রাজসিংহে জেবউন্নিসা চরিত্র এইরূপ ভাবেই চিত্রিত হইয়াছে। অবশেষে নওয়াজে নানাপ্রকারে বাধ্য হইয়া মত প্রদান করিলে, নবাব আলিবর্দী খাঁ স্বীয় দোষক্ষালনের জন্য শিকারচ্ছলে রাজমহলে গমন করিলেন। নবাব-বেগম তাহার পর সিরাজকে হোসেনকুলী খাঁর নিধনের জন্য আদেশ দেন। এইজন্য সিরাজ হোসেনকুলী খাঁর হত্যাকাণ্ড সম্পাদন করেন।

 প্রচলিত ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে, সিরাজ স্বহস্তে হোসেনকুলী খাঁর প্রাণদণ্ড করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার কোন বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায় না।[২] যে ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে নিজ জননীকে কুপথগামিনী করে, কে তাহাকে অক্ষতশরীরে জীবিত দেখিতে পারে? যাহার জন্য নিজবংশ চির কলঙ্কিত হইয়া উঠে, কে তাহার নিঃসংকোচে কালযাপন সহ্য করিয়া থাকে? এই সিরাজ-কর্তৃক হোসেনকুলী খাঁর বধসাধন ঘটিয়াছিল। যে নবাব-বেগমকে দেশীয় ও ইউরোপীয়গণ সহস্রকণ্ঠে

  1. Seir Mutaqherin Trans., Vol. I, p. 647.
  2. মুতাক্ষরীনের ইংরেজী অনুবাদে লিখিত আছে যে, সিরাজ হোসেনকুলী খাঁকে বধ pfaco op 16an6991 “He (Siraz) ordered his being hacked to pieces, and he was hacked accordingingly.” (Mutaqherin Trans., Vol. I, p. 649.) মূল মুতাক্ষরীনে লেখা আছে, হোসেনকুলী তীর, লেঙ্গা, তরবারি ও গালি নিশান হইয়াছিল। ইহাতেও সিরাজের স্বহস্তে হোসেন কুলীর বিনাশের কথা বুঝা যায় না। মূল মুতাক্ষরী, ১৯২পৃ:)।