পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৮৬
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


প্রশংসা করিয়াছেন, তিনি সিরাজউদ্দৌলাকে এই কার্যে উৎসাহিত করিয়াছিলেন। নবাব আলিবর্দী খাঁরও ইহা অবিদিত ছিল না। তবে কি কারণে কেবল সিরাজই ঐতিহাসিকগণের নিকট দোষী হইলেন, তাহা আমরা বলিতে পারি না। জানি না, সভ্য অথবা অসভ্য জাতির মধ্যে কেহ স্বীয় জননীর ধর্মধ্বংসকারীকে প্রীতির চক্ষে দেখিতে পারে কিনা? সিরাজ ইহার জন্য ঐতিহাসিকগণের নিন্দার পাত্র হইতে পারেন, কিন্তু আমরা এ স্থলে তাহাকে বিশেষরূপে দোষী বলিয়া প্রতিপন্ন করার কোন কারণ দেখিতে পাই না।

 নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পরে সিরাজউদ্দৌলা বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার সিংহাসনে আরোহণ করিয়া, আপনার জ্যেষ্ঠতাতপত্নী ও মাতৃম্বসা- ঘসেটী বেগমের মোতিঝিলের প্রাসাদ আক্রমণ করিতে লোক প্রেরণ করেন। ঘসেটী বরাবরই সিরাজের বিরোধিনী ছিলেন এবং যাহাতে সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করিতে না পারেন, তজ্জন্য তাহার দেওয়ান রাজা রাজবল্লভের দ্বারা ইংরেজদিগের সহিত যুক্তি করিতেন। আলিবর্দী সে কথা বুঝিতে পারিয়া, ইংরেজদিগের প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং তাহাদিগকে দমন করার জন্য সিরাজকে মৃত্যুশয্যায় উপদেশ দিয়া যান। সিংহাসনে আরোহণ করিয়াই সিরাজ ঘসেটীর মোতিঝিলের প্রাসাদ আক্রমণ করেন। আলিবর্দীর বেগম এই বিবাদ মিটাইতে অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন। তিনি ও জগৎশেঠ ঘসেটীকে নিবৃত্ত হইতে অনুরোধ করেন। ঘসেটী প্রথমে স্বীকৃত হন; কিন্তু অবশেষে সিরাজ তাহার দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া, তাহাকে মোতিঝিলের প্রাসাদ হইতে বন্দী করিয়া আনেন। ইহার পর ইংরেজদিগের সহিত সিরাজের ঘোরতর বিবাদ আরম্ভ হইলে, সিরাজ কলিকাতা আক্রমণ করিলেন। হলওয়েল সাহেব অন্ধকূপ হইতে বহির্গত হইয়া মুর্শিদাবাদে আনীত হইলেন। তথায় কিছুদিন বন্দী-ভাবে অবস্থানের পর, এক দিন সিরাজের সহিত সাক্ষাৎ হইলে, সিরাজ তাহাদিগকে নিষ্কৃতি দিবার অনুমতি দেন।

 হলওয়েল সাহেব বলেন যে, আলিবর্দীর বেগম নাকি তাহাদিগের মুক্তির জন্য সিরাজকে অনুরোধ করিয়াছিলেন। হলওয়েল লিখিয়াছেন যে, যখন তাঁহারা মুর্শিদাবাদে বন্দী-অবস্থায় ছিলেন, সেই সময়ে এক দিন প্রাতঃকালে আলিবর্দীর বেগমের এক জন পরিচারিকাকে তাহাদের প্রহরী শেখের সহিত এইরূপ বলাবলি করিতে শুনেন যে, পূর্ব দিন খানার সময় বেগম ইংরেজদিগকে ছাড়িয়া দিবার জন্য নবাবকে বলিয়াছেন।[১] তাহার পর তাঁহারা আবার অবগত হন যে, তাহাদিগকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হইয়া পুনর্বার কলিকাতায় যাইতে হইবে। কিন্তু অবশেষে সিরাজউদ্দৌলার সহিত সাক্ষাৎ হইলে, তিনি তাহাদিগকে মুক্তি প্রদান করিতে আদেশ দেন। হলওয়েল আপনাদিগের প্রাণরক্ষার জন্য বেগমকে বারংবার ধন্যবাদ প্রদান করিয়াছেন।

  1. Holwell's India Tracts, p. 273.