S es भूलिनौ বখতিয়ারও তাহার মনের ভাব বুঝিলেন। বখতিয়ার যদি পশুপতির অপেক্ষ। চতুর না হইতেন, তবে এত সহজে গৌড়জয় করিতে পারিতেন না। বঙ্গভূমির অদৃষ্ট্রলিপি এই যে, এ ভূমি যুদ্ধে জিত হইবে না; চাতুৰ্য্যেই ইহার জয়। চতুর ক্লাইব সাহেব ইহার দ্বিতীয় পরিচয়স্থান । বখতিয়ার কহিলেন, “ভাল, ভাল। আজ আমাদিগের শুভ দিন। এরূপ কার্ধ্যে বিলম্বের প্রয়োজন নাই। আমাদিগের পুরোহিত উপস্থিত, এখনই আপনাকে ইসলামের ৰক্ষ্মে দীক্ষিত করিবেন।” - পশুপতি দেখিলেন, সৰ্ব্বনাশ ! বলিলেন, “একবার মাত্র অবকাশ দিউম, পরিবারগণকে লইয়া আসি, সপরিবারে একেবারে দীক্ষিত হইব ।” - বখতিয়ার কহিলেন, “আমি তাহাদিগকে আনিতে লোক পাঠাইতেছি। আপনি এই প্রহরীর সঙ্গে গিয়া বিশ্রাম করুন।” প্রহরী আসিয়া পশুপতিকে ধরিল। পশুপতি ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, “সে কি ? আমি কি বন্দী হইলাম ?” বখতিয়ার কহিলেন, “আপাততঃ তাহাই বটে।” পশুপতি রাজপুরীমধ্যে নিরুদ্ধ হইলেন। উর্ণনাভের জাল ছিড়িল—সে জালে কেবল সে স্বয়ং জড়িত হুইল । ് আমরা পাঠক মহাশয়ের নিকট পশুপতিকে বুদ্ধিমান বলিয়া পরিচিত করিয়াছি। পাঠক মহাশয় বলিবেন, যে ব্যক্তি শক্রকে এতদূর বিশ্বাস করিল, সহায়হীন হইয়া তাহাদিগের অধিকৃত পুরীমধ্যে প্রবেশ করিল, তাহার চতুরতা কোথায় ? কিন্তু বিশ্বাস না করিয়া কি করেন। এ বিশ্বাস না করিলে যুদ্ধ করিতে হয়। উর্ণনাভ জাল পাতে, যুদ্ধ করে না । সেই দিন রাত্রিকালে মহাবন হইতে বিংশতি সহস্র যবন আসিয়া নবদ্বীপ প্লাবিত করিল। নবদ্বীপ-জয় সম্পন্ন হইল। যে সুর্য্য সেই দিন অস্তে গিয়াছে, আর তাহার উদয় হইল না। আর কি উদয় হইবে না ? উদয় অস্ত উভয়ই ত স্বাভাবিক নিয়ম |
পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।