হেমচন্দ্র কিয়দুর গেলে, মৃণালিনী আর গিরিজায় তাহার অমুসরণার্থ গৃহ হইতে নিষ্ক্রাস্ত হইলেন। তখন রত্নময়ী জিজ্ঞাসা করিল, “ঠাকুরাশি, উনি তোমার কে ?” মৃণালিনী কহিলেন, “দেবতা জানেন ।” প্রতিজ্ঞা—পৰ্ব্বতে বহ্নিমান বিশ্রাম করিয়া হেমচন্দ্র কিঞ্চিৎ সবল হইয়াছিলেন। শোণিতস্রাবও কতক মন্দ্রীভূত হইয়াছিল। শূলে ভর করিয়া হেমচন্দ্র স্বচ্ছন্দে গৃহে প্রত্যাগমন করিলেন। গৃহে আসিয়া দেখিলেন, মনোরম দ্বারদেশে দাড়াইয়া আছেন। মৃণালিনী ও গিরিজায়া অন্তরালে থাকিয়া মনোরমাকে দেখিলেন । মনোরম চিত্রাপিত পুত্তলিকার স্বায় দাড়াইয় রহিলেন। দেখিয়া মৃণালিনী মনে মনে ভাবিলেন, “আমার প্রভু যদি রূপে বশীভূত হয়েন, তবে আমার সুখের নিশি প্রভাত হইয়াছে।” গিরিজায়া ভাবিল, “রাজপুত্র যদি রূপে মুগ্ধ হয়েন, তবে আমার ঠাকুরাণীর কপাল ভাঙ্গিয়াছে।” . হেমচন্দ্র মনোরমার নিকট আসিয়া কহিলেন, “মনোরমা—এমন করিয়া দাড়াইয়। রহিয়াছ কেন ?” মনোরম কোন কথা কহিলেন না। হেমচন্দ্র পুনরপি ডাকিলেন, “মনোরম৷ ” তথাপি উত্তর নাই ; হেমচন্দ্ৰ দেখিলেন, আকাশমার্গে তাহার স্থিরদৃষ্টি স্থাপিত হইয়াছে । o হেমচন্দ্র পুনরায় বলিলেন, “মনোরমা, কি হইয়াছে ?” তখন মনোরমা ধীরে ধীরে আকাশ হইতে চক্ষু ফিরাইয়া হেমচন্দ্রের মুখমণ্ডলে স্থাপিত করিল। এবং কিয়ংকাল অনিমেষলোচনে তৎপ্রতি চাহিয়া রহিল। পরে হেমচশ্রের রুধিরাক্ত পরিচ্ছদে দৃষ্টিপাত হইল। তখন মনোরম বিস্থিত হইয়া কহিল, "এ কি হেমচন্দ্র। রক্ত কেন ? তোমার মুখ শুদ্ধ ; তুমি কি আহত হইয়াছ ?” হেমচন্দ্র অঙ্গুলি দ্বারা স্কন্ধের ক্ষত দেখাইয়া দিলেন। o -4
পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।