মনোরম তখন হেমচন্দ্রের হস্ত ধারণ করিয়া গৃহমধ্যে পালঙ্কোপরি লইয়া গেল । বং পলকমধ্যে বারিপূর্ণ ভৃঙ্গার আনীত করিয়া, একে একে হেমচন্দ্রের গাত্রবসন পরিত্যক্ত রাইয়া অঙ্গের রুধির সকল ধৌত করিল। এবং গোজাতিপ্রলোভন নবদুৰ্ব্বাদল ভূমি ইতে ছিন্ন করিয়া আপন কুন্দনিন্দিত দন্তে চব্বিত করিল। পরে তাহ ক্ষভমুখে প্রয়োগ রিয়া উপবীতাকারে বস্ত্র দ্বারা বঁধিল । তখন কহিল, “হেমচন্দ্র । আর কি করিব ? মি সমস্ত রাত্রি জাগরণ করিয়াছ, নিজা যাইবে ?” হেমচন্দ্র কহিলেন, *নিদ্রাভাবে নিতান্তু কাতর হইতেছি।” মৃণালিনী মনোরমার কার্য্য দেখিয়া চিস্তিতান্তঃকরণে গিরিজায়াকে কহিলেন, “এ কে । রিজায় ?” গি । নাম শুনিলাম মনোরমা । মৃ । এ কি হেমচন্দ্রের মনোরমা ? গি। তুমি কি বিবেচনা করিতেছ ? মৃ । আমি ভাবিতেছি, মনোরমাই ভাগ্যবতী। আমি হেমচন্দ্রের সেবা করিতে রিলাম না, সে করিল। যে কাৰ্য্যের জন্ত আমার অন্তঃকরণ দগ্ধ হইতেছিল—মনোরম। কাৰ্য্য সম্পন্ন করিল—দেবতারা উহাকে আয়ুষ্মতী করুন। গিরিজায়া, আমি গৃহে ললাম, আমার আর থাকা উচিত নহে। তুমি এই পল্লীতে থাক, হেমচন্দ্র কেমন কেন, সংবাদ লইয়া যাইও । মনোরম যেই হউক, হেমচন্দ্র আমারই । তুতীয় পরিচ্ছেদ হেতু—ধুমাৎ মনোরম এবং হেমচন্দ্র গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে মৃণালিনীকে বিদায় দিয়া রিজায়া উপবন-গৃহ প্রদক্ষিণ করিতে লাগিলেন। যেখানে যেখানে বাতায়ন-পথ মুক্ত খলেন, সেইখানে সাবধানে মুখ উন্নত করিয়া গৃহমধ্যে দৃষ্টিপাত করিলেন। এক ক্ষ হেমচন্দ্রকে শয়ানাবস্থায় দেখিতে পাইলেন ; দেখিলেন, তাহার শষ্যোপরি মনোরম। দয়া আছে। গিরিজায়। সেই বাতায়ন-তলে উপবেশন করিলেন। পূৰ্ব্বরাত্রে সেই তায়ন-পথে ঘৰন হেমচন্দ্রকে দেখা দিয়াছিল।
পাতা:মৃণালিনী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।