পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রতিজ্ঞা—পর্ব্বতো বহ্নিমান্।
১০৩

হেমচন্দ্রের মুখমণ্ডলে স্থাপিত করিলেন। এবং কিয়ৎকাল অনিমিক্লোচনে তৎপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। পরে হেমচন্দ্রের রুধিরাক্ত পরিচ্ছদে দৃষ্টিপাত হইল। তখন মনােরম বিস্মিত হইয়া কহিলেন।

 “একি হেমচন্দ্র? রক্ত কেন? তােমার মুখ শুষ্ক; তুমি কি আহত হইয়াছ?”

 হেমচন্দ্র অঙ্গুলির দ্বারা স্কন্ধের ক্ষত দেখাইয়া দিলেন।

 মনােরমা, তখন হেমচন্দ্রের হস্তধারণ করিয়া গৃহমধ্যে পালঙ্কোপরি লইয়া গেলেন। এবং পলকমধ্যে বারিপূর্ণ ভৃঙ্গার আনীত করিয়া, একে একে হেমচন্দ্রের গাত্রবসন পরিত্যক্ত করাইয়া অঙ্গের রুধির সকল ধৌত করিলেন। এবং গােজাতিপ্রলোভন নবদূর্ব্বাদল ভূমি হইতে ছিন্ন করিয়া আপন কুন্দনিন্দিত দন্তে চর্ব্বিত করিলেন। পরে তাহা ক্ষতমুখে ন্যস্ত করিয়া উপবীতাকারে বস্ত্র দ্বারা বাঁধিলেন। তখন কহিলেন,

 “হেমচন্দ্র! আর কি করিব? তুমি সমস্ত রাত্রি জাগরণ করিআছ, নিদ্রা যাইবে?”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “নিদ্রাভাবে নিতান্ত কাতর হইতেছি।”

 মৃণালিনী মনােরমার কার্য্য দেখিয়া চিন্তান্তঃকরণে গিরিজায়াকে কহিলেন, “এ কে গিরিজায়ে?”

 গি। “নাম শুনিলাম মনেরমা।”

 মৃ। “এ কি হেমচন্দ্রের মনােরমা?”

 গি। “তুমি কি বিবেচনা করিতেছ?”

 মৃ। “আমি ভাবিতেছি, মনের মাই ভাগ্যবতী। আমি হেমচন্দ্রের সেবা করিতে পাইলাম না, সে করিল। যে কার্য্যের জন্য আমার অন্তঃকরণ দগ্ধ হইতেছিল—মনােরমা সে কার্য্য সম্পন্ন করিল—দেবতারা উহাকে আয়ুষ্মতী করুন। গিরিজায়ে,