পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনী।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।


গজহন্তা।

 কুতবউদ্দীন, দেওয়ানে প্রত্যাগমন পূর্ব্বক বখ্‌তিয়ার খিলিজি এবং অন্যান্য বন্ধুবর্গ লইয়া কথোপকথনে নিযুক্ত ছিলেন, এমত সময়ে কয়েক জন সৈনিক পূর্ব্বপরিচিত হিন্দু যুবাকে সশস্ত্র ধৃত করিয়া আনয়ন করিল।

 রক্ষিগণ অনুমতি প্রাপ্ত হইয়া যুবাকে রাজপ্রতিনিধিসমক্ষে উপস্থিত করিলে, কুতবউদ্দীন বিশেষ মনোযোগ পূর্ব্বক তাঁহাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। যুবকের অবয়বও নিরীক্ষণযোগ্য। তাঁহার বয়ঃক্রম পঞ্চবিংশতি বৎসরের ন্যূন। শরীর ঈষন্মাত্র দীর্ঘ, এবং অনতিস্থূল ও বলব্যঞ্জক। মস্তক যেরূপ পরিমিত হইলে, শরীরের উপযোগী হইত, তদপেক্ষা বৃহৎ, এবং তাহার গঠন অতি রমণীয়। ললাট প্রশস্ত বটে, কিন্তু অল্পবয়ঃপ্রযুক্ত অনতিবৃহৎ, তাহার মধ্য দেশে “রাজদণ্ড” নামে পরিচিত শিরা প্রকটিত। ভ্রূযুগ সূক্ষ্ম, তরলরোম; তত্তলস্থ অস্থি কিছু উন্নত। চক্ষুঃ বিশেষ আয়ত নহে, কিন্তু অসাধারণ ঔজ্জ্বল্য গুণে আয়ত বলিয়া বোধ হইত। নাসা মুখের উপযোগী; অত্যন্ত দীর্ঘ নহে, কিন্তু অগ্রভাগ সূক্ষ্ম। ওষ্ঠাধর ক্ষুদ্র; সর্ব্বদা পরস্পরে সংশ্লিষ্ট; পার্শ্বভাগে অস্পষ্ট মণ্ডলার্দ্ধ রেখায় বেষ্টিত। ওষ্ঠে ও চিবুকে কোমল নবীন রোমাবলি শোভা পাইতেছিল। অঙ্গের গঠন, বলসূচক হইলেও, কর্কশতা শূন্য। বর্ণ প্রায় সম্পূর্ণ গৌর। অঙ্গে কবচ, মস্তকে উষ্ণীষ, পৃষ্ঠে তূণীর লম্বিত; করে ধনুঃ; কটিবন্ধে অসি।

 কুতবউদ্দীন যুবাকে আপাদ মস্তক নিরীক্ষণ করিতেছেন,