পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৬
মৃণালিনী।

 “হেমচন্দ্র, তুমি কেন কাতর হইয়াছ? কি হইয়াছে? হেমচন্দ্র কহিলেন, “কিছু না।”

 মনােরামা প্রথমে কিছু বলিলেন না—পরে আপনা আপনি মৃদু মৃদু কথা কহিতে লাগিলেন “কিছু না— বলিবে না! ছি! ছি! বুকের ভিতর বিছা পুষিবে।” বলিতে বলিতে মনােরমার চক্ষু দিয়া এক বিন্দু বারি বহিল;—পরে অকস্মাৎ হেমচন্দ্রের মুখ প্রতি চাহিয়া কহিলেন; “আমাকে বলিবে না কেন? আমি যে তােমার ভগিনী।”

 মনােরমার মুখের ভাবে, শান্তদৃষ্টিতে এত যত্ন, এত মৃদুতা, এত সহৃদয়তা প্রকাশ পাইল, যে, হেমচন্দ্রের অন্তঃকরণ দ্রবীভূত হইল। তিনি কহিলেন, “আমার যে যন্ত্রণা তাহা ভগিনীর নিকট কথনীয় নহে।”

 মনােরমা কহিলেন। “তবে আমি ভগিনী নহি।”

 হেমচন্দ্র কিছুতেই উত্তর করিলেন না। তথাপি প্রত্যাশাপন্ন হইয়া মনােরমা তাঁহার মুখপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। কহিলেন

 “আমি তােমার কেহ নহি।”

 হেম। “আমার দুঃখ ভগিনীর অশ্রাব্য—অপরের ও অশ্রাব্য।”

 হেমচন্দ্রের কণ্ঠস্বর করুণাময়—নিতান্ত আধিব্যক্তি পরিপূর্ণ; তাহা মনােরমার অন্তস্তলে গিয়া বাজিল। তখনই সে স্বর পবিবর্ত্তিত হইল, চক্ষে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইল—অধর দংশন করিয়া হেমচন্দ্র কহিলেন, “আমার দুঃখ কি? দুঃখ কিছুই না। আমি মালাভ্রমে কাল সর্প কণ্ঠে ধরিয়াছিলাম, এখন তাহা কণ্ঠচ্যুত করিয়াছি।

 মনােরমা আবার পূর্ব্ববৎ হেমচন্দ্রের প্রতি অনিমিক্ চক্ষে চাহিয়া রহিলেন। ক্রমে, তাঁহার মুখমণ্ডলে, অতি মধুর, অতি