তোমায় কে শিখাইল? তোমার উপদেষ্টা অলৌকিক ব্যক্তি।”
মনোরমা মুখাবনত করিয়া কহিলেন, “তিনি সর্বজ্ঞানী, কিন্তু—”
হে। “কিন্তু কি?”
ম। “তিনি অগ্নিস্বরূপ—আলো করেন, কিন্তু দগ্ধও করেন।”
মনোরমা ক্ষণেক মুখাবনত করিয়া নীরব হইয়া রহিলেন।
হেমচন্দ্র বলিলেন, “মনোরমা, তোমার মুখ দেখিয়া, আর তোমার কথা শুনিয়া, আমার বোধ হইতেছে তুমিও ভালবাসিয়াছ। বোধ হয় যাঁহাকে তুমি অগ্নির সহিত তুলনা করিলে তিনিই তোমার প্রণয়াধিকারী।”
মনোরমা পূর্ব্বমত নীরবে রহিলেন। হেমচন্দ্র পুনরপি বলিতে লাগিলেন। যদি ইহা সত্য হয়, তবে আমার একটি কথা শুন। স্ত্রীলোকের সতীত্বের অধিক আর ধর্ম্ম নাই; যে স্ত্রীর সতীত্ব নাই, সে শূকরীর অপেক্ষাও অধম। সতীত্বের হানি কেবল কার্য্যেই ঘটে এমত নহে; স্বামিভিন্ন অন্য পুরুষের চিন্তা মাত্রও সতীত্বের বিঘ্ন। তুমি বিধবা, যদি স্বামিভিন্ন অপরকে মনেও ভাব তবে তুমি ইহলোকে পরলোকে স্ত্রীজাতির অধম হইয়া থাকিবে। অতএব সাবধান হও। যদি কাহারও প্রতি চিত্ত নিবিষ্ট থাকে, তবে তাহাকে বিস্মৃত হও।”
মনোরমা উচ্চ হাস্য করিয়া উঠিলেন; পরে মুখে অঞ্চল দিয়া হাসিতে লাগিলেন, হাসি বন্ধ হয় না। হেমচন্দ্র কিঞ্চিৎ অপ্রসন্ন হইলেন, কহিলেন, “রহস্য করিতেছ কেন?”
মনোরম কহিলেন, “ভাই, এই গঙ্গাতীরে গিয়া দাঁড়াও; গঙ্গাকে ডাকিয়া কহ, “গঙ্গে, তুমি পর্ব্বতে ফিরে যাও।”
হে। “কেন?”