পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনীর লিপি।
১২৫

এক কারণ এই, আমার সহিত সাক্ষাৎ করিলে তোমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইবে। আমার অভিলাষ তোমাকে দেখিব, তৎসিদ্ধিপক্ষে তোমাকে দেখা দেওয়ার আবশ্যক কি?”

 গিরিজায়া এই লিপি লইয়া পুনরপি হেমচন্দ্রের গৃহাভিমুখে যাত্রা করিল। সন্ধ্যাকালে, মনোরমার সহিত কথোপকথন সমাপ্তির পরে, হেমচন্দ্র গঙ্গদর্শনে যাইতেছিলেন, পথে গিরিজায়ার সহিত সাক্ষাৎ হইল। গিরিজায়া তাঁহার হস্তে লিপি দান করিল।

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “তুমি আবার কেন?”

 গি। “পত্র লইয়া আসিয়াছি।”

 হে। “পত্র কাহার?”

 গি। “মৃণালিনীর পত্র।”

 হেমচন্দ্র বিস্মিত হইলেন, “এ পত্র কি প্রকারে তোমার নিকট আসিল?”

 গি। “মৃণালিনী নবদ্বীপে আছেন। আমি মথুরার কথা আপনার নিকট মিথ্যা বলিয়াছি।”

 হে। “এই পত্র তাহার?”

 গি। “হাঁ তাহার স্বহস্তলিখিত।” হেমচন্দ্র লিপিখানি না পড়িয়া তাহা খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিন্ন ভিন্ন করিলেন। ছিন্ন খণ্ড সকল বনমধ্যে নিক্ষিপ্ত করিয়া কহিলেন,

 “তুমি যে মিথ্যাবাদিনী তাহা আমি ইতিপূর্ব্বেই শুনিতে পাইয়াছি। তুমি যে দুষ্টার পত্র লইয়া আসিয়াছ, সে যে বিবাহ করিতে যায় নাই, হৃষীকেশ কর্ত্তৃক গৃহবহিস্কৃতা হইয়াছে তাহা আমি ইতিপূর্ব্বেই শ্রুত হইয়াছি। আমি কুলটার পত্র পাঠ করিব না। তুমি আমার সম্মুখ হইতে দূর হও।”