পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
মৃণালিনী।

মর্য্যাদানুসারে দান উচিত বটে। তোমাকে সহস্র মুদ্রা দিতে অনুমতি করিলাম।”

 যুবা। “যবনের বদান্যতায় আমি সন্তুষ্ট হইলাম। আমিও আপনাকে প্রতিপুরস্কৃত করিব। যমুনাতীরে আমার বাসগৃহ, সেই পর্য্যন্ত আমার সঙ্গে এক জন লোক দিলে, আমি আপনার পুরস্কার পাঠাইব। যদি রত্ন অপেক্ষা মুদ্রায় আপনার আদর অধিক হয়, তবে আমার প্রদত্ত রত্ন বিক্রয় করিবেন। দিল্লীর শ্রেষ্ঠীরা তদ্বিনিময়ে আপনাকে লক্ষ মুদ্রা দিবে।”

 কুতবদ্দীন কহিলেন, “হইতে পারে, তুমি ধনী। এজন্য সহস্র মুদ্রা তোমার গ্রহণযোগ্য নহে। কিন্তু তোমার বাক্য সম্মানসূচক নহে—তুমি সদভিপ্রেত কার্য্যে উদ্যত হইয়াছিলে বলিয়া অনেক ক্ষমা করিয়াছি—অধিক ক্ষমা করিব না। আমি যে তোমার রাজার প্রতিনিধি, তাহা তুমি কি বিস্মৃত হইলে?”

 যুবা। “আমার রাজার প্রতিনিধি ম্লেচ্ছ নহে।”

 কুতবউদ্দীন সকোপ কটাক্ষে কহিলেন, “তবে কে তোমার রাজা? কোন্ দেশে তোমার বাস?”

 যুবা। “মগধে আমার বাস?”

 কুত। “মগধ এই বখ্‌তিয়ার কর্ত্তৃক যবনরাজ্যভুক্ত হইয়াছে।”

 যুবা। “মগধ দস্যু কর্ত্তৃক পীড়িত হইয়াছে।”

 কুত। “দস্যু কে?”

 যুবা। “বখ্‌তিয়ার খিলিজি।”

 কুতবউদ্দীনের চক্ষে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইতে লাগিল। কহিলেন “তোমার মৃত্যু উপস্থিত।”

 যুবা হাসিয়া কহিলেন, “দস্যুহস্তে?”