পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনীর লিপি।
১২৯

 গিরিজায়া দেখিয়া হর্ষান্বিত হইলেন,—তিনি বুঝিতে পারিলেন যে যখন মৃণালিনীর চক্ষে জল আসিয়াছে—তখন তাঁহার ক্লেশের কিছু শমতা হইয়াছে। ইহা সকলে বুঝে না—মনে করে “কই, ইহার চক্ষে ত জল দেখিলাম না? তবে ইহার কিসের দুঃখ?” যদি ইহা সকলে বুঝিত, সংসারের কত মর্ম্মপীড়াই না জানি নিবারণ হইত।

 কিয়ৎক্ষণ উভয়েই নীরব হইয়া রহিলেন। মৃণালিনী কিছু বলিতে পারেন না গিরিজায়াও কিছু জিজ্ঞাসা করিতে পারেন পরে মৃণালিনী কহিলেন, “গিরিজায়া, আর একবার তোমাকে যাইতে হইবে।”

 গি। “আবার সে পাষণ্ডের নিকট যাইব কেন?”

 মৃ। “পাষণ্ড বলিও না। হেমচন্দ্র ভ্রান্ত হইয়া থাকিবেন—এ সংসারে অভ্রান্ত কে? কিন্তু হেমচন্দ্র পাষণ্ড নহেন। আমি স্বয়ং তাঁহার নিকট এখনই যাইব—তুমি সঙ্গে চল। তুমি আমাকে ভগিনীর অধিক স্নেহ কর—তুমি আমার জন্য না করিয়াছ কি? তুমি কখন আমাকে অকারণে মনঃপীড়া দিবে না— কখন আমার নিকট এ সকল কথা মিথ্যা করিয়া বলিবে না, ইহা আমি নিশ্চিত জানি। কিন্তু তাই বলিয়া, আমার হেমচন্দ্র আমাকে বিনাপরাধে ত্যাগ করিলেন ইহা তাঁহার মুখে না শুনিয়া কি প্রকারে অন্তঃকরণকে স্থির করিতে পারি? যদি তাঁহার নিজমুখে শুনি যে তিনি মৃণালিনীকে কুলটা ভাবিয়া ত্যাগ করিলেন, তবে এ প্রাণ বিসর্জ্জন করিতে পারিব।”

 গি। “প্রাণ বিসর্জ্জন! সে কি মৃণালিনি?”

 মৃণালিনী কোন উত্তর করিলেন না। গিরিজায়ার স্কন্ধে বাহু রোপণ করিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। গিরিজায়াও রোদন করিল।