পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনী।
১২

যবন দস্যু জয় করিতে পারিত না। অপহারী দস্যুর প্রতি রাজদণ্ড বিধান করিব।”

 বখ্‌তিয়ার কহিলেন, “এখন বাঁচিলে ত?”

 কুতবউদ্দীন কহিলেন, “তোমার যে পরিচয় দিতেছ এবং তোমার যেরূপ স্পর্দ্ধা তাহাতে তোমাকে ছাড়িয়া দিতে পারি না। তুমি এক্ষণে কারাগারে বাস করিবে। পশ্চাৎ তোমার প্রতি দণ্ডাজ্ঞা প্রচার হইবে। রক্ষিগণ, এখন ইহাকে কারাগারে লইয়া যাও।”

 রক্ষিগণ হেমচন্দ্রকে বেষ্টিত করিয়া লইয়া চলিল। কুতবউদ্দীন তখন বখ্‌তিয়ারকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন,

 “সাহাব! এই হিন্দুকে কি ভাবিতেছেন?”

 বখ্‌তিয়ার কহিলেন, “অগ্নিস্ফুলিঙ্গ স্বরূপ। যদি কখন হিন্দুসেনা পুনর্ব্বার সমবেত হয়, তবে এ ব্যক্তি সকলকে অগ্নিময় করিবে।”

 কুত। “সুতরাং অগ্নিস্ফুলিঙ্গ পূর্ব্বেই নির্ব্বাণ করা কর্ত্তব্য।”

 উভয়ে এই রূপ কথোপকথন হইতেছিল ইত্যবসরে দুর্গমধ্যে তুমুল কোলাহল হইতে লাগিল। ক্ষণপরে পুররক্ষিগণ আসিয়া সম্বাদ দিল, যে বন্দী পলাইয়াছে।

 কুতবউদ্দীন ভ্রূভঙ্গ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি প্রকারে পলাইল?”

 রক্ষিগণ কহিল, “দুর্গমধ্যে একজন যবন একটা অশ্ব লইয়া ফিরাইতেছিল। আমরা বিবেচনা করিলাম যে কোন সৈনিকের অশ্ব। আমরা ঘোটকের নিকট দিয়া যাইতেছিলাম। তাহার নিকটে আসিবামাত্র বন্দী চকিতের ন্যায় লম্ফ দিয়া অশ্বপৃষ্ঠে উঠিল। এবং অশ্বে কষাঘাত করিয়া বায়ুবেগে দুর্গ দ্বার দিয়া নিষ্ক্রান্ত হইল।”