পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৪
মৃণালিনী।

গিল। নিকটে রাজমহিষী ছিলেন—রাজা ভোজন পাত্রের উপর পড়িয়া যান দেখিয়া মহিষী তাঁহার হস্ত ধরিলেন; কহিলেন,

 “চিন্তা নাই—আপনি গাত্রোত্থান করুন।” এই বলিয়া তাঁহার হস্ত ধরিয়া তুলিলেন। রাজা কলের পুত্তলীর ন্যায় দাঁড়াইয়া উঠিলেন।

 মহিষী কহিলেন, “চিন্তা কি? নৌকায় সকল দ্রব্য নীত হইয়াছে, চলুন আমরা খড়ক্কী দ্বার দিয়া পুরুষোত্তম যাত্রা করি।”

 এই বলিয়া মহিষী রাজার অধৌত হস্ত ধারণ করিয়া খড়ক্কী দ্বার পথে পুরুষোত্তম যাত্রা করিলেন। সেই রাজকুলকলঙ্ক অসমর্থ রাজার সঙ্গে বঙ্গরাজ্যের রাজলক্ষ্মীও যাত্রা করিলেন।

 ষোড়শ সহচর লইয়া কর্কটাকার বখ্‌তিয়ার খিলিজি গৌড়ে শ্বরের রাজপুরী অধিকার করিল।

 ষষ্টি বৎসর পরে যবন ইতিহাসবেত্তা মিন্‌হাজদ্দীন এইরূপ লিখিয়াছিলেন। ইহার কতদূর সত্য কতদূর মিথ্যা তাহা কে জানে? যখন মনুষ্যের লিখিত চিত্রে, সিংহ পরাজিত, মনুষ্য সিংহের অপমান কর্ত্তা স্বরূপ চিত্রিত হইয়াছিল, তখন সিংহের হস্তে চিত্রফলক দিলে কিরূপ চিত্র লিখিত হইত? মনুষ্য মুষিক তুল্য প্রতীয়মান হইত সন্দেহ নাই। মন্দভাগিনী বঙ্গভূমি, সহজেই দুর্ব্বলা, আবার তাহাতে শত্রু হস্তে চিত্রফলক!