পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাল ছিঁড়িল।
১৫৭

ধর্ম্ম। তদবলম্বী হইয়া ইহকাল পরকালের মঙ্গল সাধন করুন।”

 পশুপতি যবনের শঠতা বুঝিলেন। বুঝিলেন যে তাহার অভিপ্রায় এই মাত্র, যে কার্য্য সিদ্ধ করিয়া নিবদ্ধ সন্ধি ছলক্রমে ভঙ্গ করিবে। আরও বুঝিলেন, ছলক্রমে না পারিলে বলক্রমে করিবে। অতএব কপটের সহিত কাপট্য অবলম্বন না করিয়া দর্প করিয়া ভাল করেন নাই। তিনি ক্ষণেক চিন্তা করিয়া কহিলেন, “যে আজ্ঞা আমি আজ্ঞানুবর্ত্তী হইব।”

 বখ্‌তিয়ার ও তাঁহার মনের ভাব বুঝিলেন। বখ্‌তিয়ার যদি পশুপতির অপেক্ষা চতুর না হইতেন তবে এত সহজে বঙ্গ জয় করিতে পারিতেন না। বঙ্গভূমির অদৃষ্টলিপি এই যে এ ভূমি যুদ্ধে জিত হইবে না; চাতুর্য্যেই ইহার জয়। চতুর ক্লাইব সাহেব ইহার দ্বিতীয় পরিচয় স্থান।

 বখ্‌তিয়ার কহিলেন, “ভাল, ভাল। অদ্য আমাদিগের শুভ দিন। এরূপ কার্য্যে বিলম্বের প্রয়োজন নাই। আমাদিগের পুরোহিত উপস্থিত; এখনই আপনাকে ইস্‌লামের ধর্ম্মে দীক্ষিত করিবেন।”

 পশুপতি দেখিলেন, সর্ব্বনাশ। বলিলেন, “একবার মাত্র অবকাশ দিউন, পরিবারগণকে লইয়া আসি, সপরিবারে একেবারে দীক্ষিত হইব।”

 বখ্‌তিয়ার কহিলেন, “আমি তাঁহাদিগকে আনিতে লোক পাঠাইতেছি। আপনি এই প্রহরীর সঙ্গে গিয়া বিশ্রাম করুন্।”

 প্রহরী আসিয়া পশুপতিকে ধরিল। পশুপতি ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, “সে কি? আমি কি বন্দী হইলাম?”

 বখ্‌তিয়ার কহিলেন, “আপাততঃ তাহাই বটে।”

 পশুপতি রাজপুরী মধ্যে নিরুদ্ধ হইলেন। ঊর্ণনাভে র জাল ছিঁড়িল—সে জালে কেবল সে স্বয়ং জড়িত হইল।