পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যবনবিপ্লব।
১৬৫

 ব্রা। “গৌড়—গৌড় জান না? মৃণালিনী আমার পিতার গৃহে থাকিত।”

 হে। “তার পর?”

 ব্রা। “তার পর—তার পর কি? তার পর আমার এই দশা—মৃণালিনী লক্ষ্মী—সাবিত্রী—আমার প্রতি ফিরিয়া চাহিল না। রাগ করিয়া আমার পিতার নিকট আমি তাহার মিথ্যাপবাদ দিলাম। পিতা তাহাকে বিনা দোষে গৃহবহিষ্কৃত করিয়া দিলেন। রাক্ষসী—রাক্ষসী আমাদিগের গৃহ ত্যাগ করিয়া গেল।”

 হে। “তবে তুমি তাহাকে গালি দিতেছ কেন?”

 ব্রা। “কেন?—কেন গালি—গালি দিই? মৃণালিনী আমাকে ফিরিয়া দেখিত না—আমি—আমি তাহাকে দেখিয়া জীবন—জীবন ধারণ করিতাম। সে চলিয়া আসিল, সেই—সেই অবধি আমার সর্ব্বস্ব ত্যাগ, তাহার জন্য কোন্ দেশে—কোন দেশে না গিয়াছি—কোথায় পিশাচীর সন্ধান না করিয়াছি। গিরিজায়া—ভিখারীর মেয়ে—তার আযি বলিয়া দিল—নবদ্বীপে আসিয়াছে—নবদ্বীপে আসিলাম—সন্ধান নাই। যবন—যবন হস্তে মরিলাম, রাক্ষসীর জন্য মরিলাম দেখা হইলে বলিও—সতী লক্ষ্মীর অবমাননা করিয়াছিলাম—ফুল ফলিল।”

 আর ব্যোমকেশের কথা সরিল না। সে পরিশ্রমে একেবারে নির্জ্জীব হইয়া পড়িল। নির্ব্বাণোন্মুখ দীপ নিবিল। বিকট মুখভঙ্গী করিয়া ব্যোমকেশ প্রাণত্যাগ করিল।

 হেমচন্দ্র আর দাঁড়াইলেন না। আর যবন বধ করিলেন না। কোন মতে পথ করিয়া গৃহাভিমুখে চলিলেন।