পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
মৃণালিনী।

ঙ্গত সাহসে সেই দুর্দ্দমনীয় যমুনার স্রোতােবেগে আরােহণ করিয়া, প্রয়াগের ঘাটে আসিয়া লাগিল। একজন নৌকায় রহিল একজন তীরে নামিল। ঘাটের উপরে, সংসারবিরাগী পুণ্যপ্রয়াসীদিগের কতকগুলিন আশ্রম আছে। তন্মধ্যে একটি ক্ষুদ্র কুটীরে আগত ব্যক্তি প্রবেশ করিলেন।

 কুটীর মধ্যে এক ব্রাহ্মণ কুশাসনে উপবেশন করিয়া জপে নিযুক্ত ছিলেন; ব্রাহ্মণ অতি দীর্ঘাকার পুরুষ; শরীর শুষ্ক; আয়ত মুখমণ্ডলে শ্বেতশ্মশ্রু বিরাজিত; ললাট ও বিরলকেশ তালুদেশে অল্পমাত্র বিভূতিশােভা। ব্রাহ্মণের কান্তি গম্ভীর এবং কটাক্ষ কঠিন; দেখিলে তাহাকে নির্দ্দয় বা অভক্তিভাজন বলিয়া বােধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, অথচ শঙ্কা হইত। আগন্তুককে দেখিবামাত্র তাঁহার সে পরুষভাব যেন দূর হইল, মুখের গাম্ভীর্য্য মধ্যে প্রসাদের সঞ্চার হইল। আগন্তুক ব্রাহ্মণকে প্রণাম করিয়া সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন। ব্রাহ্মণ আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন,

 “বৎস হেমচন্দ্র, আমি অনেক দিবসাবধি তােমার প্রতীক্ষা করিতেছি।”

 হেমচন্দ্র বিনীতভাবে কহিলেন, “অপরাধ গ্রহণ করিবেন না, দিল্লীতে কার্য্য সিদ্ধ হয় নাই। পরন্তু যবন আমার পশ্চাদ্গামী হইয়াছিল; এই জন্য কিছু সতর্ক হইয়া আসিতে হইয়াছিল। তদ্ধেতু বিলম্ব হইয়াছে।”

 ব্রাহ্মণ কহিলেন, “দিল্লীর সম্বাদ আমি সকল শুনিয়াছি। যােগমায়ার দর্শনে আমার শিষ্য দেবিদাস গমন করিয়াছিলেন। তােমার সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল, তােমার স্মরণ থাকিতে পারে। তিনি আমার নিকট সকল পরিচয় দিয়াছেন। এবং ইহাও বলিয়াছেন, যে এক রাত্রি তুমি তাঁহার আশ্রমে লুক্কায়িত