পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনীর সুখ কি?
১৬৭

শয্যা রচনা করিলেন। মৃণালিনী তাঁহার অভিপ্রায় বুঝিয়া কহিলেন, “তুমি গৃহে গিয়া শয়ন কর।”

 গিরিজায়া মৃণালিনীর কথা শুনিয়া আনন্দিত হইল, বলিল, “একত্রে যাইব।”

 মৃণালিনী বলিলেন, “আমি পশ্চাৎ যাইতেছি।”

 গি। “আমি ততক্ষণ অপেক্ষা করিব। ভিখারিণী দুই দণ্ড পর্ণশয্যায় শুইলে ক্ষতি কি? কিন্তু সাহস পাই ত বলি—রাজপুত্রের সহিত এ জন্মের মত সম্বন্ধ, ঘুচিল—তবে আর কার্ত্তিকের হিমে আমরা কষ্ট পাই কেন?”

 মৃ। “গিরিজায়ে,—হেমচন্দ্রের সহিত এ জন্মে আমার সম্বন্ধ ঘুচিবে না। আমি কালিও হেমচন্দ্রের দাসী ছিলাম— আজিও তাঁহার দাসী।”

 গিরিজায়ার বড় রাগ হইল—সে উঠিয়া বসিল। বলিল, “কি ঠাকুরাণি! তুমি এখনও বল আমি সেই পাষণ্ডের দাসী! তুমি যদি তাঁহার দাসী—তবে আমি চলিলাম—আমার এখানে আর প্রয়োজন নাই।”

 মৃ। “গিরিজায়ে—যদি হেমচন্দ্র তোমাকে পীড়ন করিয়া থাকেন, তুমি স্থানান্তরে নিন্দা করিও। হেমচন্দ্র আমার প্রতি কোন অহিতাচরণ করেন নাই—আমি কেন তাঁহার নিন্দা সহিব? তিনি রাজপুত্র—আমার স্বামী; তাঁহাকে পাষণ্ড বলিও না।”

 গিরিজায়া আরও রাগ করিল। বহুযত্নরচিত পর্ণশয্যা ছিন্ন ভিন্ন করিয়া ফেলিয়া দিতে লাগিল। কহিল “পাষণ্ড বলিব না—একবার বলিব” (বলিয়াই কতকগুলি শয্যাবিন্যাসের পল্লব সদর্পে জলে ফেলিয়া দিল) “একবার বলিব—শতবার বলিব” (আবার পল্লব প্রক্ষেপ)—“দশবার বলিব” (পল্লব প্রক্ষেপ)