পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
মৃণালিনী।

উভয়ে মোক্ষোন্মুখ অশ্রুজল কষ্টে নিবারিত করিলেন; তখন কতবার উভয়ের মুখপ্রতি চাহিয়া অনর্থক মধুর হাসি হাসিলেন—সে হাসির অর্থ “আমি এখন কত সুখী।” পরে যখন প্রভাতোদয়সূচক পক্ষিগণ রব করিয়া উঠিল, তখন কতবার উভয়েই বিস্মিত হইয়া ভাবিলেন যে “আজি এখনই রাত্রি পোহাইল কেন?”—আর সেই নগরমধ্যে যবনবিপ্লবের যে কোলাহল উচ্ছ্বসিতসমুদ্রের বীচিরববৎ উঠিতেছিল—আজি হৃদয় সাগরের তরঙ্গরবে সে রব ডুবিয়া গেল।

 উপবনগৃহে আর এক স্থানে আর একটা কাণ্ড হইতেছিল। দিগ্বিজয় প্রভুর আজ্ঞামত রাত্রি জাগরণ করিয়া গৃহ রক্ষা করিতেছিল, মৃণালিনীকে লইয়া যখন হেমচন্দ্র আইসেন, তখন সে দেখিয়া চিনিল। মৃণালিনী তাহার নিকট অপরিচিতা ছিলেন না—যে কারণে পরিচিত ছিলেন, তাহা ক্রমে প্রকাশ পাইতেছে। মৃণালিনীকে দেখিয়া দিগ্বিজয় কিছু বিস্মিত হইল কিন্তু জিজ্ঞাসার সম্ভাবনা নাই; কি করে? ক্ষণেক পরে গিরিজায়াও আসিল দেখিয়া দিগ্বিজয় মনে ভাবিল “বুঝিয়াছি—ইহারা দুই জন গৌড় হইতে আমাদিগের দুই জনকে দেখিতে আসিয়াছে। ঠাকুরাণী যুবরাজকে দেখিতে আসিয়াছেন—আর এ ছুঁড়ি আমাকে দেখিতে আসিয়াছে সন্দেহ নাই।” এই ভাবিয়া দিগ্বিজয় একবার আপনার গোঁপ দাড়ি চুমরিয়া ইল, এবং ভাবিল, “না হবে কেন?” আবার ভাবিল, “এ ছুঁড়ি কিন্তু বড় নষ্ট—এক দিনের তরে কই আমাকে যে ভাল কথা বলে নাই—কেবল আমাকে গালিই দেয়—তবে ও আমাকে দেখিতে আসিবে তাহার সম্ভাবনা কি? যাহা হউক একটা পরীক্ষাই করিয়া দেখা যাউক। রাত্রি ত শেষ হইল—প্রভুও ফিরিয়া আসিয়াছেন এখন আমি পাশ কাটিয়া একটুকু শুই।