পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৬
মৃণালিনী।

কুল পরিচয় নহে—উভয়ের অন্তঃকরণের পরিচয় পাইলাম। তখন আমার বয়স পঞ্চদশ বৎসর মাত্র। কিন্তু সেই বয়সেই আমি তাঁহার দাসী হইলাম। সে কোমল বয়সে সকল বুঝিতাম। হেমচন্দ্রকে দেবতার ন্যায় চক্ষে দেখিতে লাগিলাম। তিনি যাহা বলিতেন, তাহা পুরাণ বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। তিনি বলিলেন “বিবাহ কর।” সুতরাং আমারও বোধ হইল, ইহা অবশ্য কর্ত্তব্য। চতুর্থ দিবসে, দুর্য্যোগের উপশম দেখিয়া উপবাস করিলাম; দিগ্বিজয় উদ্যোগ করিয়া দিল। তীর্থ পর্য্যটনে রাজপুত্রের কূলপুরোহিত সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমাদিগকে পরিণীত করিলেন।”

 গি। “কন্যা সম্প্রদান করিল কে?”

 মৃ। অরুন্ধতী নামে আমার মাতার এক প্রাচীন কুটুম্বিনী ছিলেন। তিনি সম্বন্ধে মাতার ভগিনী হইতেন। আমাকে বাল্যাবধি লালন পালন করিয়াছিলেন। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করিতেন, এবং আমার সকল দৌরাত্ম সহ্য করিতেন। আমি তাঁহার নামোল্লেখ করিলাম। দিগ্বিজয়, কোন ছলে পুরমধ্যে তাঁহাকে সম্বাদ পাঠাইয়া দিয়া ছলক্রমে হেমচন্দ্রের গৃহে তাঁহাকে ডাকিয়া আনিল। অরুন্ধতী মনে জানিতেন আমি যমুনায় ডুবিয়া মরিয়াছি। তিনি আমাকে জীবিতা দেখিয়া এতই আহ্লাদিতা হইলেন, যে আর কোন কথাতেই অসন্তুষ্ট হইলেন না। আমি যাহা বলিলাম তাহাতেই স্বীকৃতা হইলেন। তিনিই কন্যা সম্প্রদান করিলেন। বিবাহের পর মাসীর সঙ্গে পিতৃভবনে গেলাম। সকল কথা সত্য বলিয়া কেবল বিবাহের কথা লুকাইলাম। আমি, হেমচন্দ, দিগ্বিজয়, কুলপুরোহিত, আর অরুন্ধতী মাসী ভিন্ন এ বিবাহ আর কেহ জানিত না। অদ্য তুমি জানিলে।