পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহম্মদআলির প্রায়শ্চিত্ত।
১৮৩

 পশুপতি কহিলেন, “সে বিষয়ে চিত্তস্থির করুন। আমি এক্ষণে মৃত্যু স্থির করিয়াছি। প্রাণত্যাগ করিতে স্বীকৃত আছি— কিন্তু যবন ধর্ম্ম অবলম্বন করিব না।”

 ম। “আপনাকে এক্ষণে যবনধর্ম্মাবলম্বন করিতে বলিতেছি না। কেবল মাত্র রাজ প্রতিনিধির তৃপ্তার্থ যবনের পরিচ্ছদ পরিধান করিতে বলিতেছি।”

 প। “ব্রাহ্মণ হইয়া কি জন্য স্নেচ্ছের বেশ করিব?”

 ম। “আপনি ইচ্ছাপূর্ব্বক না পরিলে, আপনাকে বলপূর্ব্বক পরাইব। অস্বীকারে লাভের ভাগ অপমান।”

 পশুপতি উত্তর করিলেন না। মহম্মদ আলি স্বহস্তে তাঁহাকে যবন বেশ পরাইলেন। কহিলেন, “আমার সঙ্গে আসুন।”

 প। “কোথায় যাইব?”

 ম। “আপনি বন্দী—জিজ্ঞাসার আবশ্যক কি?”

 মহম্মদ আলি তাঁহাকে সিংহদ্বারে লইয়া চলিলেন। যে ব্যক্তি পশুপতির রক্ষায় নিযুক্ত ছিল, সেও সঙ্গে সঙ্গে চলিল।

 দ্বারে প্রহরিগণের জিজ্ঞাসামতে মহম্মদ আলি আপন পরিচয় দিলেন; এক সঙ্কেত করিলেন। প্রহরিগণ তাঁহাদিগকে যাইতে দিল। সিংহদ্বার হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া তিন জনে কিছু দূর রাজপথ অতিবাহিত করিলেন। তখন যবনসেনা নগরমন্থন সমাপন করিয়া বিশ্রাম করিতেছিল। সুতরাং রাজপথে আর উপদ্রব ছিল না। মহম্মদ আলি কহিলেন,

 “ধর্ম্মাধিকার! আপনি আমাকে বিনা দোষে তিরস্কার করিয়াছেন। বখ্‌তিয়ার খিলিজির এরূপ অভিপ্রায় আমি কিছুই অবগত ছিলাম না। তাহা হইলে আমি কদাচ প্রবঞ্চকের বার্ত্তাবহ হইয়া আপনার নিকট যাইতাম না। যাহা হউক আপনি আমার কথায় প্রত্যয় করিয়া এরূপ দুর্দশাপন্ন হইয়াছেন। ই-