পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্তিমকালে।
১৮৯

লিপ্ত হইয়াছিল―এবং এক্ষণ পর্য্যন্ত সন্তপ্ত ছিল। পিতাপুত্রে এক দীর্ঘিকা হইতে জলবহন করিয়া তপ্ত ইষ্টক সকল শীতল করিলেন, এবং বহু কষ্টে তন্মধ্য হইতে অষ্টভুজার অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। যথাস্থানের ইষ্টকরাশি স্থানান্তরিত হইলে তন্মধ্য হইতে দেবীর প্রতিমা আবিষ্কৃতা হইল। কিন্তু প্রতিমার পাদমূলে―এ কি? সভয়ে পিতাপুত্র নিরীক্ষণ করিলেন যে মনুষ্যের মৃতদেহ রহিয়াছে। তখন উভয়ে মৃতদেহ উত্তোলন করিয়া দেখিলেন যে পশুপতির দেহ।

 বিস্ময়সূচক বাক্যের পর দুর্গাদাস কহিলেন, “যে প্রকারেই প্রভুর এ দশা হইয়া থাকুক, ব্রাহ্মণের এবঞ্চ প্রতিপালিতের কার্য্য আমাদিগের অবশ্য কর্তব্য। গঙ্গাতীরে এই দেহ লইয়া আমরা প্রভুর সৎকার করি চল।”

 এই বলিয়া দুই জনে প্রভুর দেহ বহন করিয়া গঙ্গাতীরে লইয়া গেলেন। তথায় পুত্রকে শবরক্ষায় নিযুক্ত করিয়া দুর্গাদাস নগরে কাষ্ঠাদি সৎকারের উপযোগী সামগ্রীর অনুসন্ধানে গমন করিলেন। এবং যথাসাধ্য সুগন্ধী কাষ্ঠ এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করিয়া গঙ্গাতীরে প্রত্যাগমন করিলেন।

 তখন দুর্গাদাস পুত্রের আনুকূল্যে যথাশাস্ত্র দাহের পূর্ব্বগামিক্রিয়া সকল সমাপন করিয়া সুগন্ধী কাষ্ঠে চিতা রচনা করিলেন। এবং তদুপরি পশুপতির মৃতদেহ স্থাপন করিয়া অগ্নি প্রদান করিতে গেলেন।

 কিন্তু অকস্মাৎ শ্মশানভূমে এ কাহার আবির্ভাব হইল? ব্রাহ্মণদ্বয় বিস্মিতলোচনে দেখিলেন যে, এক মলিন বসনা, রূক্ষকেশী, আলুলায়িতকুন্তলা, ভস্ম ধূলি সংসর্গে বিবর্ণা, উন্মাদিনী আসিয়া শ্মশানভূমে অবতরণ করিতেছে। রমণী ব্রাহ্মণদিগের