পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
মৃণালিনী।

 গিরিজায়ার সহিত দিগ্বিজয়ের পরিণয় হইল। গিরিজায়া মৃণালিনীর পরিচর্য্যায় নিযুক্তা রহিলেন, দিগ্বিজয় হেমচন্দ্রের কার্য্য পূর্ব্ববৎ নির্ব্বাহ করিতে লাগিলেন। কথিত আছে যে বিবাহ অবধি এমন দিনই ছিল না, যেদিন গিরিজায়া এক আধ ঘা ঝাঁটার আঘাতে দিগ্বিজয়ের শরীর পবিত্র করিয়া না দিত। ইহাতে যে দিগ্বিজয় বড়ই দুঃখিত ছিলেন এমত নহে। বরং একদিন কোন দৈবকারণ বশতঃ গিরিজায়া ঝাঁটা মারিতে ভুলিয়া ছিলেন, ইহাতে দিগ্বিজয় বিষণ্ণ বদনে গিরিজায়াকে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “গিরি, আজি তুমি আমার উপর রাগ করিয়াছ না কি?” বস্তুতঃ ইহারা যাবজ্জীবন পরমসুখে কালাতিপাত করিয়াছিল।

 হেমচন্দ্রকে নূতন রাজ্যে স্থাপন করিয়া মাধবাচার্য্য কামরূপে গমন করিলেন। তথায় হেমচন্দ্রের সাহায্যে বখতিয়ার খিলিজি পরাভূত হইয়া দূরীকৃত হইলেন। এবং প্রত্যাগমন কালে অপমানে ও কষ্টে তাঁহার প্রাণবিয়োগ হইল। কিন্তু সে সকল ঘটনা বর্ণিত করা এ গ্রন্থের উদ্দেশ্য নহে।

 রত্নময়ী এক সম্পন্ন পাটনীকে বিবাহ করিয়া হেমচন্দ্রের নূতন রাজ্যে গিয়া বাস করিল। তথায় মৃণালিনীর অনুগ্রহে তাহার স্বামীর বিশেষ সৌষ্ঠব হইল। গিরিজায়া ও রত্নময়ী চিরকাল “সই” “সই” রহিল।

 মৃণালিনী মাধবাচার্য্যের দ্বারা হৃষীকেশকে অনুরোধ করাইয়া মণিমালিনীকে আপন রাজধানীতে আনিলেন। মণিমালিনী রাজপুরীমধ্যে মৃণালিনীর সখীর স্বরূপ বাস করিতে লাগিলেন। তাঁহার স্বামী রাজবাটীর পৌরহিত্যে নিযুক্ত হইলেন।

 শান্তশীল যখন দেখিল, যে হিন্দুর আর রাজ্য পাইবার সম্ভাবনা নাই তখন সে আপন চতুরতা ও কর্ম্মদক্ষতা দেখাইয়া