পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মৃণালিনী।

 উৎসববাসর আগত হইল। প্রভাতাবধি, “রায় পিথোরার” প্রস্তরময় দুর্গের প্রাঙ্গনভূমি জনাকীর্ণ হইতে লাগিল। সশস্ত্রে, শত শত সিন্ধুনদপারবাসী শ্মশ্রুল যোদ্ধৃবর্গ রঙ্গাঙ্গনের চারিপার্শ্বে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইল; তাহাদিগের করস্থিত উন্নতফলক বর্ষার অগ্রভাগে প্রাতঃসূর্য্যকিরণ জ্বলিতে লাগিল। মালাসম্বন্ধ কুসুমদামের ন্যায় তাহাদিগের বিচিত্র উষ্ণীষশ্রেণী শোভা পাইতে লাগিল। তৎপশ্চাতে দাস, শিল্পী প্রভৃতি অপর মুসলমানেরা বিবিধ বেশভূষা করিয়া দণ্ডায়মান হইল। যে দুই এক জন হিন্দু কৌতূহলের একান্ত বশবর্ত্তী হইয়া সাহসে ভর করিয়া রঙ্গ দর্শনে আসিয়াছিল তাহারা তৎপশ্চাতে স্থান পাইল, অথবা স্থান পাইল না, কেন না যবনদিগের বেত্রাঘাতে ও পদাঘাতে পীড়িত এবং ভীত হইয়া অনেককে পলায়ন করিতে হইল।

 রাজপ্রতিনিধি স্বদলে সমাগত হইয়া রঙ্গাঙ্গনের শিরোভাগে দণ্ডায়মান হইলেন। তখন রহস্য আরম্ভ হইল। প্রথমে মল্লদিগের যুদ্ধ, পরে খড়্গী, শূলী, ধানুষ্কী, সশস্ত্র অশ্বারোহীর যুদ্ধ, হইতে লাগিল। পরে মত্ত সেনামাতঙ্গ সকল মাহুত সহিত আনীত হইয়া নানাবিধ ক্রীড়াকৌশল দেখাইতে লাগিল। দর্শকেরা মধ্যে মধ্যে একতানমনে ক্রীড়া সন্দর্শন করিতে লাগিলেন, মধ্যে মধ্যে আপন আপন মন্তব্য সকল পরস্পরের নিকট ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। এক স্থানে কয়েকটী বর্ষীয়ান্ মুসলমান একত্র হইয়া বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করিতেছিলেন।

 এক জন কহিল,

 “সত্য সত্যই কি পারিবে?”

 অপর উত্তর করিল,

 “না পারিবে কেন? ঈশ্বর যাহাকে সদয় সে কি না পারে?