পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লুব্ধ।
৪৭

ব্যোমকেশের ন্যায় বিস্মিত হইয়াছিলেন, কেন না তিনি ত ব্যোমকেশকে দংশন করেন নাই। ভল্লুকোচিত কার্য্য তাঁহার করণীয় নহে। কিন্তু তখনই নক্ষত্রালোকে খর্ব্বাকৃতা বালিকামূর্ত্তি সম্মুখ হইতে অপসৃত হইতেছে দেখিতে পাইলেন। গিরিজায়া তাঁহার বসনাকর্ষণ করিয়া মৃদুস্বরে “পলাইয়া আইস” বলিয়া স্বয়ং পলায়ন করিল।

 পলায়ন মৃণালিনীর স্বভাবসঙ্গত নহে। তিনি পলায়ন করিলেন না। ব্যোমকেশ প্রাঙ্গনে দাঁড়াইয়া আর্ত্তনাদ করিতেছে এবং কাতরোক্তি করিতেছে দেখিয়া, তিনি গজেন্দ্রগমনে নিজ শয়নাগার অভিমুখে চলিলেন। কিন্তু তৎকালে ব্যোমকেশের আর্ত্তনাদে গৃহস্থ সকলেই জাগরিত হইয়াছিল। সম্মুখে হৃষীকেশ। হৃষীকেশ পুত্রকে শশব্যস্ত দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,

 “কি হইয়াছে, কেন যাঁড়ের ন্যায় চীৎকার করিতেছ?”

 ব্যোমকেশ কহিল, “মৃণালিনী অভিসারে গমন করিয়াছিল, আমি তাহাকে ধৃত করিয়াছি বলিয়া সে আমার পৃষ্ঠে দারুণ দংশন করিয়াছে।”

 হৃষীকেশ পুত্রের কুরীতি কিছুই জানিতেন না। মৃণালিনীকে প্রাঙ্গন হইতে উঠিতে দেখিয়া এ কথায় তাঁহার বিশ্বাস হইল। তৎকালে তিনি মৃণালিনীকে কিছুই বলিলেন না। নিঃশব্দে গজগামিনীর পশ্চাৎ তাঁহার শয়নাগারে আসিলেন।