কোপ আরও বৃদ্ধি হইল। তিনি অধিকতর বেগে কহিলেন,
“কালি প্রাতে! অদ্যই দূর হও।”
মৃ। “যে আজ্ঞা। আমি সখী মণিমালিনীর নিকট বিদায় হইয়া আজি দূর হইতেছি।” এই বলিয়া মৃণালিনী গাত্রোত্থান করিলেন।
হৃষীকেশ কহিলেন, “মণিমালিনীর সহিত কুলটার আলাপ কি?”
এবার মৃণালিনীর চক্ষে জল আসিল। কহিলেন, “তাহাই হইবে। আমি কিছুই লইয়া আসি নাই; কিছুই লইয়া যাইব না। এক বসনে চলিলাম। আপনাকে প্রণাম হই।”
এই বলিয়া দ্বিতীয় বাক্যব্যয় ব্যতীত মৃণালিনী শয়নাগার হইতে বহিষ্কৃতা হইয়া চলিলেন।
যেমন অন্যান্য গৃহবাসীর ব্যোমকেশের আর্ত্তনাদে শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিয়াছিলেন, মণিমালিনীও তদ্রূপ উঠিয়াছিলেন। মৃণালিনীর সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার পিতা শয্যাগৃহ পর্যন্ত আসিলেন দেখিয়া তিনি এই অবসরে ভ্রাতার সহিত কথােপকথন করিতেছিলেন। এবং ভ্রাতার দুশ্চরিত্র বুঝিতে পারিয়া তাঁহাকে ভর্ৎসনা করিতেছিলেন। যখন তিনি ভর্ৎসনা সমাপন করিয়া প্রত্যাগমন করেন, তখন প্রাঙ্গনভূমে, দ্রুতপাদ-বিক্ষেপিনী মৃণালিনীর সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হইল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন,
“সই, অমন করিয়া এত রাত্রে কোথা যাইতেছ?”
মৃণালিনী কহিলেন “সখি, মণিমালিনি, তুমি চিরায়ুষ্মতী হও। আমার সহিত আলাপ করিও না—তােমার পিতার নিষেধ।”
মণি। “সে কি মৃণালিনী তুমি কঁদিতেছ কেন? সর্ব্বনাশ!