পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
মৃণালিনী।

 হে। “আজি হইতে তােমার ভাই হইলাম। এখন বুঝিলে?”

 ম। “বুঝিয়াছি। কিন্তু ভগিনী বলিয়া আমাকে কখন তিরস্কার করিবে না ত?”

 হেমচন্দ্র মনােরমার কথার প্রণালীতে চমৎকৃত হইতে লাগিলেন। ভাবিলেন “একি অলৌকিক সরলা বালিকা? না উন্মাদিনী?” কহিলেন, “কেন তিরস্কার করিব?”

 ম। “যদি আমি দোষ করি?”

 হে। “দোষ দেখিলে কে না তিরস্কার করে?”

 মনোরমা ক্ষুণ্ণভাবে দাঁড়াইয়া রহিলেন, বলিলেন “আমি কখন ভাই দেখি নাই; ভাইকে কি লজ্জা করিতে হয়?”

 হে। “না।”

 ম। “তবে আমি তােমাকে লজ্জা করিব না—তুমি আমাকে লজ্জা করিবে?”

 হেমচন্দ্র হাসিলেন—কহিলেন, “আমার বক্তব্য তােমার পিতামহকে জানাইতে পারিলাম না।—তাহার উপায় কি?”

 ম। “আমি বলিতেছি।” এই বলিয়া মনােরমা মৃদু মৃদু স্বরে জনার্দ্দনের নিকট হেমচন্দ্রের অভিপ্রায় জানাইলেন। হেমচন্দ্র দেখিয়া বিস্মিত হইলেন যে মনােরমার সেই মৃদু কথা বধিরের বােধগম্য হইল।

 ব্রাহ্মণ আনন্দিত হইয়া রাজপুত্ত্রকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। এবং কহিলেন, “মনােরমে ব্রাহ্মণীকে বল রাজপুত্র তাঁহার নাতি হইলেন—আশীর্ব্বাদ করুন।” এই বলিয়া ব্রাহ্মণ স্বয়ং “ব্রাহ্মণি! ব্রাহ্মণি!” বলিয়া ডাকিতে লাগিলেন। ব্রাহ্মণী তখন স্থানান্তরে গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা ছিলেন—ডাক শুনিতে পাইলেন