গিরিজায়া মৃণালিনীকে সম্বোধন করিয়া কহিল “আজিকার দিন কাটিল।”
মৃণালিনী কোন উত্তর করিলেন না।
গিরিজায়া পুনরপি কহিল, “কালিকার দিনও কাটিবে—পরদিনও কাটিবে—কেন কাটিবে না?”
মৃণালিনী তথাপি কোন উত্তর করিলেন না। কেবলমাত্র দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন।
গিরিজায়া কহিল, “ঠাকুরাণী এ কি এ? দিবানিশি চিন্তা করিয়া কি হইবে? যদি আমাদিগের নবদ্বীপ যাত্রা অকর্ত্তব্য কর্ম্ম হইয়া থাকে, চল এখনও ফিরিয়া যাই।”
মৃণালিনী এবার উত্তর করিলেন। বলিলেন, “কোথায় যাইব?”
গি। “চল হৃষীকেশ গৃহে যাই।”
মৃ। “বরং এই গঙ্গাজলে অবগাহন করিয়া মরিব।”
গি “চল তবে মথুরায় যাই।”
মৃ। “আমি ত রলিয়াছি তথায় আমার স্থান নাই। কূলটার ন্যায় রাত্রিকালে যে পিতার গৃহ ত্যাগ করিয়া আসিয়াছি, কি বলিয়া সে পিতার গৃহে আর মুখ দেখাইব?”
গি। “কিন্ত তুমি ত আপন ইচ্ছায় আইস নাই, অসৎ জভিপ্রায়েও আইস নাই। যাইতে ক্ষতি কি?”
মৃ। “সে কথা কে বিশ্বাস করিবে? যে পিতার গৃহে আদরের গৃহিণী ছিলাম সে পিতার গৃহে ঘৃনিত হইয়াই বা কি প্রকারে থাকিব?”
গিরিজায়া অন্ধকারে দেখিতে পাইল না, যে মৃণালিনীর চক্ষুঃ হইতে বারিবিন্দুর পর বারিবিন্দু পড়িতে লাগিল। গিরিজয়া কহিল “তবে কোথায় যাইবে?”