পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
মৃণালিনী।

বিস্ময়জনক বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। প্রথমতঃ তাঁহার বয়ঃক্রম দুরনুমেয়, সহজে তাঁহাকে বালিকা বলিয়া বোধ হইত, কিন্তু কখন কখন মনোরমাকে অতিশয় গাম্ভীর্য্যশালিনী দেখিতেন। মনোরমা কি অদ্যাপিও কুমারী? হেমচন্দ্র এক দিন কথোপকথনচ্ছলে মনোরমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মনোরমে, তোমার শশুর বাটী কোথা?” মনোরমা কহিল, “বলিতে পারি না।” আর এক দিন জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “মনোরমা। তুমি কয় বৎসরের হইয়াছ?” মনোরমা তাহাতেও উত্তর দিয়াছিলেন, “বলিতে পারি না।”

 মাধবাচার্য্য হেমচন্দ্রকে উপবনে স্থাপিত করিয়া দেশ পর্য্যটনে যাত্রা করিলেন। তাঁহার অভিপ্রায় এই, যে এ সময় বঙ্গদেশীয় অধীন রাজগণে যাহাতে নবদ্বীপে সসৈন্য সমবেত হইয়া বঙ্গেশ্বরের আনুকূল্য করেন, তদ্বিষয়ে তাঁহাদিগকে প্রবৃত্তি দেন। হেমচন্দ্র নবদ্বীপে তাঁহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। কিন্তু নিষ্কর্ম্মে দিনযাপন ক্লেশকর হইয়া উঠিল। হেমচন্দ্র বিরক্ত হইলেন। এক এক বার মনে হইতে লাগিল যে দিগ্বিজয়কে গৃহরক্ষায় রাখিয়া অশ্ব লইয়া একবার গৌড়ে গমন করেন। কিন্তু তথায় মৃণালিনীর সাক্ষাৎ লাভ করিলে তাঁহার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইবে, বিনা সাক্ষাতে গৌড় যাত্রায় কি ফলোদয় হইবে? এই সকল আলোচনায় যদিও গৌড়যাত্রায় হেমচন্দ্র নিরস্ত হইলেন, তথাপি অনুদিন মৃণালিনী চিন্তায় হৃদয় নিযুক্ত থাকিত। একদা প্রদোষ কালে তিনি শয়নকক্ষে, পর্য্যঙ্কোপরি শয়ন। করিয়া মৃণালিনীর চিন্তা করিতে ছিলেন। চিন্তাতেও হৃদয় সুখলাভ করিতেছিল। মুক্ত বাতায়ন পথে হেমচন্দ্র প্রকৃতির শোভা নিরীক্ষণ করিতে ছিলেন। নবীন শরদুদয়। রজনী চন্দ্রিকাশালিনী, আকাশ নির্ম্মল, বিস্তৃত, নক্ষত্রখচিত, ক্কচিৎ