স্তর-পরম্পরা-বিন্যস্ত শ্বেতাম্বুদমালায় বিভূষিত। বাতায়ন পথে অদূরবর্ত্তিনী ভাগিরথীও দেখা যাইতে ছিল; ভাগিরথী বিশলোরসী, বহুদূরবিসর্পিণী, চন্দ্রকর প্রতিঘাতে উজ্জ্বলতরঙ্গিণী, দূরপ্রান্তে ধূমময়ী, নববারি-সমাগম-প্রমাদিনী। নববারি সমাগম জনিত কল্লোল হেমচন্দ্র শুনিতে পাইতেছিলেন। বাতায়ন পথে বায়ু প্রবেশ করিতেছিল, বায়ু গঙ্গাতরঙ্গে নিক্ষিপ্ত জলকণা-সংস্পর্শে শীতল, নিশাসমাগমে প্রফুল্ল বন্যকুসুম সংস্পর্শে সুগন্ধী; চন্দ্রকর-প্রতিঘাতী-শ্যামলোজ্বল বৃক্ষ পত্র বিধূত করিয়া, নদীতীরবিরাজিত কাশকুসুম আন্দোলিত করিয়া, বায়ু বাতায়ন পথে প্রবেশ করিতেছিল। হেমচন্দ্র বিশেষ প্রীতিলাভ করিলেন।
অকস্মাৎ বাতায়ন পথ অন্ধকার হইল—চন্দ্রালোকের গতিরোধ হইল। হেমচন্দ্র বাতায়ন সন্নিধি একটী মনুষ্য মুণ্ড দেখিতে পাইলেন। বাতায়ন ভূমি হইতে কিছু উচ্চ—এজন্য কাহারও হস্ত পদাদি কিছু দেখিতে পাইলেন না—কেবল এক খানি মুখ দেখিলেন। মুখ খানি অতি বিশাল শ্মশ্রুসংযুক্ত, তাহার মস্তকে উষ্ণীষ। সেই উজ্জ্বল চন্দ্রালোকে, বাতায়নে, নিকটে, সম্মুখে, শ্মশ্রুসংযুক্ত উষ্ণীযধারী মনুষ্য মুণ্ড দেখিলেন। দেখিয়া হেমচন্দ্র শয্যা হইতে লম্ফ দিয়া নিজ শাণিত অসি গ্রহণ করিলেন।
অসি গ্রহণ করিয়া হেমচন্দ্র চাহিয়া দেখিলেন যে বাতায়নে আর মনুষ্য মুণ্ড নাই।
হেমচন্দ্র অসি হস্তে দ্বারোদঘাটন করিয়া গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। বাতায়নতলে আসিলেন। তথায় কেহ নাই।
গৃহের চতুঃপার্শ্বে, গঙ্গাতীরে, বনমধ্যে হেমচন্দ্র ইতস্ততঃ অন্বেষণ করিলেন। কোথাও কাহাকে দেখিলেন না।
হেমচন্দ্র গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন। তখন রাজপুত্র পিতৃ-