উপবন গৃহ হইতে রাজপথ কিছু দূর। যে পথ বাহিত করিয়া উপবন গৃহ হইতে রাজপথে যাইতে হয় সে বিরল-লোকপ্রবাহ গ্রাম্য পথ মাত্র। হেমচন্দ্র সেই পথে চলিলেন। সেই পথ পার্শ্বে অতি বিস্তারিত, সুরম্য সোপানাবলি শোভিত, এক দীর্ঘিকা ছিল। দীর্ঘিকা পার্শ্বে অনেক বকুল, শাল, অশোক, চম্পক, কদম্ব, অশ্বথ, বট, আম, তিন্তিড়ী প্রভৃতি বৃক্ষ সমূহ ছিল। বৃক্ষগুলিন সুশৃঙ্খল শ্রেণীবিন্যস্ত ছিল এমত নহে, বহুতর বৃক্ষ পরস্পর শাখায় শাখায় সম্বদ্ধ হইয়া বাপীতীরে ঘনান্ধকার করিয়া রহিত। দিবসেও তথায় অন্ধকার। কিম্বদন্তী ছিল যে সেই সরোবরে ভূতযোনি বিহার করিত। এই সংস্কার প্রতিবাসীদিগের মনে এরূপ দৃঢ় হইয়া উঠিয়াছিল যে সচরাচর তথায় কেহ যাইত না। যদি যাইত তবে একাকী কেহ যাইত না। নিশাকালে কদাপি কেহ যাইত না।
পৌরাণিক ধর্ম্মের একাধিপত্য কালে হেমচন্দ্রও দেবযোনির অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্রত্যয়শালী হইবেন তাহার বিচিত্র কি? কিন্তু প্রেত সম্বন্ধে প্রত্যয়শালী বলিয়া তিনি গন্তব্য পথে যাইতে সঙ্কোচ করেন এরূপ ভীরু স্বভাব তাঁহার নহে। অতএব তিনি নিঃসঙ্কোচে বাপীপার্শ্ব দিয়া চলিলেন। নিঃসঙ্কোচ বটে কিন্তু কৌতুহল শূন্য নহেন। বাপীর পার্শ্বে সর্ব্বত্র এবং তত্তীর প্রতি অনিমিক লোচনে চক্ষুঃ নিক্ষিপ্ত করিতে করিতে চলিলেন। সোপানমার্গের নিকটবর্তী হইলেন। সহসা চমকিত হইলেন। জনশ্রুতির প্রতি তাহার বিশ্বাস দৃঢ়ীকৃত হইল। দেখিলেন, চন্দ্রালোকে, সর্ব্বাধঃস্থ সোপানে, জলে চরণ রক্ষা করিয়া শ্বেতবসন-পরিধানা কে বসিয়া আছে। স্ত্রীমূর্ত্তি বলিয়া তাঁহার বোধ হইল। শ্বেত-বসনা, অবেণী-সম্বদ্ধকুন্তলা; কেশজালে স্কন্ধ, পৃষ্ঠদেশ, বাহুযুগল, মুখমণ্ডল, হৃদয়, সর্ব্বত্র আচ্ছন্ন করিয়া রহি-