পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
মৃণালিনী।

 পশুপতি যৌবনকালে কাশীধামে পিতার নিকট থাকিয়া শাস্ত্রাধ্যয়ন করিতেন, তথায় কেশব নামে এক বঙ্গীয় ব্রাহ্মণ বাস করিতেন। হৈমবতী নামে কেশবের এক অষ্টমবর্ষীয়া কন্যা ছিল। তাহার সহিত পশুপতির পরিণয় হয়। কিন্তু অদৃষ্ট বশতঃ বিবাহের রাত্রেই কেশব, সম্প্রদানের পর কন্যা লইয়া অদৃশ্য হইল। আর তাহার কোন সন্ধান পাওয়া গেল না। সেই পর্য্যন্ত পশুপতি পত্নীসহবাসে বঞ্চিত ছিলেন। কারণবশতঃ একাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দ্বারপরিগ্রহ করেন নাই। তিনি এক্ষণে রাজপ্রাসাদ তুল্য উচ্চ অট্টালিকায় বাস করিতেন, কিন্তু বামানয়ন-নিঃসৃত জ্যোতিরভাবে সেই উচ্চ অট্টালিকা আজি অন্ধকারময়।

 আজি রাত্রে সেই উচ্চ অট্টালিকায় এক নিভৃত কক্ষে, পশুপতি একাকী দীপালোকে বসিয়া আছেন। এই কক্ষের পশ্চাতেই আম্রকানন। আম্রকাননে নিষ্ক্রান্ত হইবার জন্য একটি গুপ্তদ্বার আছে। সেই দ্বারে আসিয়া নিশীথকালে, মৃদু মৃদু কে আঘাত করিল। গৃহাভ্যন্তর হইতে পশুপতি দ্বার উদঘাটিত করিলেন। এক ব্যক্তি গৃহে প্রবেশ করিল। সে যবন জাতীয়। হেমচন্দ্র তাহাকেই বাতায়ন পথে দেখিয়াছিলেন। পশুপতি, তখন তাহাকে পৃথগাসনে উপবেশন করিতে বলিয়া বিশ্বাস জনক অভিজ্ঞান দেখিতে চাহিলেন। যবন অভিজ্ঞান দৃষ্ট করাইলেন।

 পশুপতি সংস্কৃতে কহিলেন। “বুঝিলাম আপনি যবন সেনাপতির বিশ্বাসপত্র। সুতরাং আমারও বিশ্বাসপাত্র। আপনারই নাম মহম্মদ আলি? এক্ষণে সেনাপতির অভিপ্রায় কি প্রকাশ করুন।”

 যবন সংস্কৃতে উত্তর দিল। কিন্তু তাঁহার সংস্কৃতের তিনভাগ