পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মােহিনী।
৮৫

উপরে অবাধ্য ক্ষুদ্র কুঞ্চিত কেশ সকল আসিয়া কেলি করে। দ্বিরদ রদ যদি কুসুমকোমল হইত, কিম্বা চম্পক যদি গঠনোপযোগী কাঠিন্য পাইত, কিম্বা চন্দ্রকিরণ যদি শরীর বিশিষ্ট হইত, তবে তাহাতে সে বাহুযুগল গড়িতে পারা যাইত, —সে হৃদয় কেবল সেই হৃদয়েই গড়া যাইতে পারিত। এ সকলই অন্য সুন্দরীর আছে; মনোরমার রূপরাশি অতুল কেবল তাঁহার সর্ব্বাঙ্গীন সৌকুমার্য্যের জন্য। তাঁহার বদন সুকুমার, অধর, ভ্রূযুগ, ললাট, সুকুমার। সুকুমার কপোল; সুকুমার কেশ। অলকাবলি যে ভুজঙ্গ শিশুরূপী, সেও সুকুমার ভুজঙ্গ শিশু। গ্রীবায়, গ্রীবাভঙ্গীতে, সৌকুমার্য্য; বাহুতে, বাহুর প্রক্ষেপে, সৌকুমার্য্য; হৃদয়ের উচ্ছ্বাসে সেই সৌকুমার্য্য; সুকুমার চরণ, চরণ বিন্যাস সুকুমার। গমন সুকুমার, বসন্ত বায়ুসঞ্চালিত কুসুমিত লতার মন্দাদোলন তুল্য; বচন সুকুমার, নিশীথ সময়ে, জলরাশি পার হইতে সমাগত বিরহ সঙ্গীত তুল্য; কটাক্ষ সুকুমার, ক্ষণমাত্র জন্য মেঘমালামুক্ত সুধাংশুর কিরণ সম্পাত তুল্য; আর ঐ যে মনোরমা দেবীগৃহ দ্বারদেশে দাঁড়াইয়া আছেন,—পশুপতির মুখাবলোকন জন্য উন্নত মুখী, নয়ন তারা উর্দ্ধস্থাপন-স্পন্দিত, আর বাপীজলার্দ্র, অবদ্ধ কেশরাশির কিয়দংশ এক হস্তে ধরিয়া, এক চরণ ঈষন্মাত্র অগ্রবর্ত্তী করিয়া, যে ভঙ্গীতে মনোরমা দাঁড়াইয়া আছেন;—ও ভঙ্গীও সুকুমার; নবীন সূর্য্যাগ্রে সদ্য প্রফুল্ল দলমালাময়ী নলিনীর প্রসন্ন ব্রীড়া তুল্য সুকুমার। সেই মাধুর্য্যময় দেহের উপর দেবীপার্শ্বস্থিত রত্নদীপের আলোক পতিত হইল। পশুপতি অতৃপ্ত নয়নে দেখিতে লাগিলেন।