পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মােহিতা।
৮৯

 পশুপতি নীরব হইয়া রহিলেন। মনােরম পুনরপি বলিতে লাগিলেন, “পশুপতি, আমি মিনতি করিতেছি এই দুরভিসন্ধি ত্যাগ কর।”

 পশুপতি পূর্ব্ববৎ অধােবদনে রহিলেন, তাঁহার রাজ্যাকাঙ্ক্ষা এবং মনােরমার লাভাকাঙ্ক্ষা উভয়ই গুরুতর। কিন্তু রাজ্য লাভের যত্ন করিলে, মনোরমার প্রণয় হারাইতে হয় সেও অত্যজ্য। উভয় শঙ্কটে তাঁহার চিত্ত মধ্যে গুরুতর চাঞ্চল্য জন্মিল। তাঁহার মতির স্থিরতা দূর হইতে লাগিল। “যদি মনােরমাকে পাই ভিক্ষাও ভাল, রাজ্যে কাজ কি?” এইরূপ পুনঃ পুনঃ মনে ইচ্ছা হইতে লাগিল। কিন্তু তখনই আবার ভাবিতে লাগিলেন, “কিন্তু তাহা হইলে লােকনিন্দা, জনসমাজে কলঙ্ক, জাতিনাশ, সকলের ঘৃণিত হইব। তাহা কি প্রকারে সহিব?” পশুপতি নীরবে রহিলেন; কোন উত্তর দিতে পারিলেন না।

 মনােরমা উত্তর না পাইয়া কহিতে লাগিলেন, “শুন পশুপতি, তুমি আমার কথায় উত্তর দিলে না। আমি চলিলাম। কিন্তু এই প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে ইহ জন্মে আমার সাক্ষাৎ হইবে না।”

 এই বলিয়া মনােরম পশ্চাৎ ফিরিলেন। পশুপতি রােদন করিয়া উঠিলেন।

 অমনি মনোরমা আবার ফিরিলেন। আসিয়া পশুপতির হস্তধারণ করিলেন। পশুপতি তাঁহার মুখপানে চাহিয়া দেখিলেন। দেখিলেন, যে তেজোগর্ব্ববিশিষ্টা, কুঞ্চিতভ্রূবীচি-বিক্ষেপকারিণী সরস্বতী মূর্ত্তি আর নাই; কুসুম সুকুমারী বালিকা তাঁহার হস্তধারণ করিয়া তাঁহার সঙ্গে রােদন করিতেছে।

 মনােরমা কহিলেন, “পশুপতি, কাঁদিতেছ কেন?”

 পশুপতি চক্ষের জল মুছিয়া কহিলেন, “তােমার কথায়।”