পাতা:মেগাস্থেনীসের ভারত-বিবরণ - রজনীকান্ত গুহ (১৯৪৪).pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
মেগাস্থেনীসের ভারত-বিবরণ

আরিয়ান

ভারতবর্ষের সাতটি জাতি

 সমগ্র ভারতবাসী প্রায় সাতটি জাতিতে বিভক্ত। ইহাদিগের মধ্যে ব্রাহ্মণগণ (Sophistai = পণ্ডিতগণ) সংখ্যায় অপর জাতি অপেক্ষা ন্যূন হইলেও মানমর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ, ইহাদিগকে কোনও প্রকার দৈহিক শ্রম করিতে হয় না; কিংবা শ্রম দ্বারা ধন উপার্জন করিয়া রাজকোষে প্রদান করিতেও হয় না। রাজ্যের মঙ্গলোদ্দেশ্যে দেবতাগণের যজ্ঞ সম্পাদন ভিন্ন ইহাদিগের অবশ্যকরণীয় আর কোনও কর্তব্য নাই। যদি কোনও ব্যক্তি স্বীয় ইষ্টসিদ্ধির জন্য যজ্ঞ করিতে চাহে তবে তাহাকে ব্রাহ্মণগণ দ্বারা তাহা সম্পন্ন করাইতে হয়। অন্যথা তাহা দেবগণের প্রীতিপ্রদ হয় না। ভারতবাসিগণের মধ্যে কেবল ইহাঁরাই ভবিষ্যৎ গণনা করিতে সমর্থ। ব্রাহ্মণ ভিন্ন আর কাহারও ভবিষ্যৎ গণনা করিবার অধিকার নাই। ইহারা বৎসরের বিভিন্ন ঋতু ও রাজ্যে কোনও বিপৎপাত হইবে কিনা এতদনুরূপ বিষয়ে গণনা করিয়া থাকেন, কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের ভাগ্যগণনা করিতে তাঁহাদিগের অভিরুচি হয় না। তাহার কারণ এই যে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাপারের সহিত ভবিষ্যদ্‌গণনার কোনও সম্পর্ক নাই কিংবা এজন্য শ্রম করা তাঁহারা অগৌরবের বিষয় মনে করেন। যিনি গণনায় তিন বার ভ্রম করেন তাঁহাকে আর কোনও দণ্ড ভোগ করিতে হয় না, কেবল অবশিষ্ট জীবনের জন্য মৌনব্রত অবলম্বন করিতে হয়। যিনি এই মৌনব্রত গ্রহণ করিয়াছেন তাঁহাকে বাঙ্নিষ্পত্তি করিতে বাধ্য করিতে পারে এমন জন সংসারে নাই। [এই পণ্ডিতগণ উলঙ্গ হইয়া বিচরণ করেন। ইহাঁরা শীতকালে রৌদ্রসম্ভোগের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত বায়ুতে বাস করেন; গ্রীষ্মকালে উত্তাপ অত্যন্ত প্রখর হইলে মাঠে ও নিম্ন ভূমিতে বৃহৎ বৃহৎ বৃক্ষের ছায়ায় কালাতিপাত করেন।