পাতা:মেগাস্থেনীসের ভারত-বিবরণ - রজনীকান্ত গুহ (১৯৪৪).pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মেগাস্থেনীসের ভারত-বিবরণ

প্রথম বারের বপনে যথেষ্ট শস্য উৎপন্ন না হইলেও দ্বিতীয় বার বপনের শস্য হইতে তাহারা কখনও একেবারে বঞ্চিত হয় না। তৎপর স্বভাবজাত ফল এবং জলাভূমিতে উৎপন্ন বিবিধ স্বাদুতাবিশিষ্ট মূল অধিবাসীদিগের প্রাণধারণে প্রচুর সহায়তা করে। ফলত ভারতের প্রায় সমগ্র সমতল ভূমি নদীজল বা গ্রীষ্মকালীন বর্ষাপাত দ্বারা সিক্ত; এজন্য উহা অতি উর্বর। প্রতি বৎসর আশ্চর্য রূপে ঠিক একই সময়ে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি আরম্ভ হয়। আর গ্রীষ্মকালের প্রখর উত্তাপে জলাভূমিজাত মূল, বিশেষত দীর্ঘ নলগুলি সুপক্ব হয়। বিশেষত ভারতবাসীদিগের মধ্যে এমত কতকগুলি প্রথা আছে যাহাতে ওদেশে দুর্ভিক্ষ হইতে পারে না। অন্যান্য জাতির নিয়ম এই যে তাহারা যুদ্ধ উপস্থিত হইলে শস্য-ক্ষেত্র বিনষ্ট করিয়া সেগুলিকে মরুভূমিতে পরিণত করে। কিন্তু ভারতবর্ষে কৃষকগণ পবিত্র ও রক্ষণীয় বলিয়া পরিগণিত; এজন্য যথন পার্শ্ববর্তী স্থানে যুদ্ধ চলিতে থাকে তখনও তাহারা বিপদ কাহাকে বলে জানে না। কারণ উভয়পক্ষের যোদ্ধৃগণ যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া পরস্পরকে হনন করে; কিন্তু কৃষিনিরত ব্যক্তিগণ সর্বসাধারণের হিতকারী বলিয়া অক্ষত থাকে। অধিকন্তু, ভারতবর্ষীয়েরা কখনও শত্রুর শস্য-ক্ষেত্র অগ্নিতে দগ্ধ কিংবা তাহাদিগের বৃক্ষসমূহ উচ্ছিন্ন করে না।

 ভারতবর্ষে বহুসংখ্যক বৃহৎ নৌচলনোপযোগী নদী আছে। তাহারা উত্তর সীমাস্থিত পর্বতমালায় উৎপন্ন হইয়া সমতল ভূমির মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইতেছে। ইহাদিগের অনেকগুলি পরস্পরের সহিত মিলিত হইয়া গঙ্গা নামক নদীতে পতিত হইয়াছে। এই গঙ্গানদী ইহার উৎপত্তি স্থানে ৩০ স্টাডিয়ম্ বিস্তৃত; ইহা উত্তর হইতে দক্ষিণে প্রবাহিত হইয়া মহাসমুদ্রে প্রবেশ করিয়াছে। গঙ্গা গাঙ্গেয়দিগের (Gangaridai) দেশের পূর্ব সীমা। গাঙ্গেয়গণের বহুসংখ্যক মহাকায় হস্তী আছে। এজন্য এই দেশ কখনও কোনও বৈদেশিক ভূপতি কর্তৃক বিজিত হয় নাই,