কারণ অপরাপর সমুদায় জাতিই বিপুল বলশালী অগণ্য হস্তীর কথা শুনিয়া ভয় পায়। [যেমন, মাকেদনবাসী সেকেন্দর সাহা সমগ্র এসিয়া জয় করিয়াও কেবল গাঙ্গেয়দিগের সহিত সংগ্রামে বিমুখ হইয়াছিলেন। কারণ তিনি ভারতের অন্যান্য জাতি পরাজিত করিয়া সমগ্র সেনাবল সহ গঙ্গাতীরে উপনীত হইয়া জানিতে পারিলেন, গাঙ্গেয়গণের যুদ্ধার্থ সজ্জিত সংগ্রামনিপুণ চারি সহস্র হস্তী আছে; ইহা শুনিয়াই তিনি তাহাদিগের সহিত যুদ্ধের সংকল্প পরিত্যাগ করিলেন।] গঙ্গার সমতুল্য সিন্ধু নামক নদ উহার ন্যায় উত্তর দিকে উৎপন্ন হইয়া মহাসমুদ্রে পতিত হইয়াছে। সিন্ধু ভারতের পশ্চিম সীমা। ইহা বিস্তৃত সমতল ভূমির মধ্য দিয়া প্রবাহিত হইতেছে, এবং ইহাতে বহু নৌচলনোপযোগী উপনদী পতিত হইয়াছে; তন্মধ্যে হাইপানিস (Hypanis), হাইডাস্পীস (Hydaspes) ও আকেসিনীস (Akesines) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই সকল নদী ব্যতীত নানা প্রকারের আরও বহুসংখ্যক নদী আছে; সমুদায় দেশ তদ্বারা সমাচ্ছন্ন ও সিক্ত হওয়াতে সর্ববিধ শস্য ও শাকসবজী অপর্যাপ্ত উৎপন্ন হইতেছে।
ভারতভূমি এমন সুজলা ও অসংখ্য নদীপূর্ণা কেন? তদ্দেশীয় দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকগণ তাহার নিম্নলিখিত কারণ নির্দেশ করিয়া থাকেন। তাঁহারা বলেন, ভারতবর্ষের চতুষ্পার্শ্ববর্তী শক, বাহলীক ও আর্যজাতির দেশ ভারতবর্ষ অপেক্ষা উচ্চ; সুতরাং প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে চতুর্দিক হইতে নিম্নতর সমতল ভূমিতে জলধারা প্রবাহিত হইয়া ক্রমে ক্রমে ভূমি সিক্ত করে এবং এইরূপেই বহুসংখ্যক নদী উৎপন্ন হয়।
ভারতবর্ষের একটী নদীর এক বিশেষত্ব আছে। নদীটীর নাম শিল; উহা শিল নামক নির্ঝরিণী হইতে প্রবাহিত হইতেছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সমুদায় নদীর মধ্যে কেবল ইহাতে যাহা পতিত হয় তাহাই তলদেশে ডুবিয়া যায়, কিছুই ভাসে না।