পাতা:মেঘনাদবধ কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৪০).pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৪
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
৪০৪—৪১৬

কভু নাহি শুনি হেন এ তিন ভুবনে!
নিশার স্বপন আজি দেখিনু কি জাগি?
সত্য করি কহ মোরে, মিত্র-রত্নোত্তম।
না পারি বুঝিতে কিছু; চঞ্চল হইনু
এ প্রপঞ্চ[১] দেখি, সখে, বঞ্চো না আমারে।
চিত্ররথ-রথী-মুখে শুনিনু বারতা,
ঊরিবেন মায়া-দেবী দাসের সহায়ে;
পাতিয়া এ ছল পশিলা কি আসি
লঙ্কাপুরে? কহ, বুধ, কার এ ছলনা?”
উত্তরিলা বিভীষণ; “নিশার স্বপন
নহে এ, বৈদেহী-নাথ, কহিনু তোমারে।
কালনেমি নামে দৈত্য বিখ্যাত জগতে
সুরারি, তনয়া তার প্রমীলা সুন্দরী।
মহাশক্তি-অংশে, দেব, জনম বামার,
মহাশক্তি-সম তেজে! কার সাধ্য আঁটে
বিক্রমে এ দানবীরে? দম্ভোলি-নিক্ষেপী?
সহস্রাক্ষে যে হর্য্যক্ষ[২] বিমুখে সংগ্রামে,
সে রক্ষেন্দ্রে, রাঘবেন্দ্র, রাখে পদতলে
বিমোহিনী, দিগম্বরী যথা দিগম্বরে[৩]!
জগতের রক্ষা-হেতু গড়িলা বিধাতা
এ নিগড়ে, যাহে বাঁধা মেঘনাদ বলী—
মদ-কল কাল হস্তী! যথা বারি-ধারা
নিবারে কানন-বৈরী ঘোর দাবানলে,


  1. প্রপঞ্চ—বিস্তার, বিবরণ।
  2. হর্য্যক্ষ—সিংহ।
  3. দিগম্বরী যথা দিগম্বরে—কালী যেরূপ শিবকে পদতলে রাখিয়াছেন, প্রমীলা আপন পতিকেও সেইরূপ বশীভূত করিয়া রাখিয়াছে।