পাতা:মেঘনাদবধ কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৯৪০).pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
মধুসূদন-গ্রন্থাবলী
১৬-২৪

কে জানে মহিমা তব এ ভবমণ্ডলে?
নরাধম আছিল যে নর নরকুলে[১]
চৌর্য্যে রত, হইল সে তোমার প্রসাদে,[১]
মৃত্যুঞ্জয়, যথা মৃত্যুঞ্জয় উমাপতি![১][২]
হে বরদে, তব বরে চোর রত্নাকর[৩]
কাব্যরত্নাকর[৩] কবি! তোমার পরশে,
সুচন্দন-বৃক্ষশোভা বিষবৃক্ষ ধরে!
হায়, মা, এ হেন পুণ্য আছে কি এ দাসে?[৪]
কিন্তু যে গো গুণহীন সন্তানের মাঝে


    পূর্ব্বক তাঁহাকে অনেক ভর্ৎসনা করাতে তিনি অসৎ পথ পরিত্যাগ করিয়া কঠোর তপস্যা আরম্ভ করিলেন। একদা তিনি স্নান করিয়া আপন আবাসে প্রত্যাগমন করিতেছেন, এমন সময়ে এক জন ব্যাধ তাঁহার সমস্কে কামক্রীড়াসক্ত ক্রৌঞ্চমিথুনের মধ্যে ক্রৌঞ্চকে বাণাঘাতে বধ করিল। তিনি এতাদৃশ ক্রুরাচবণ দর্শন করিয়া সরোষে এই নিম্নলিখিত শ্লোকটী পাঠ করিলেন—

    “মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
    যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।”

     ওরে নিষাদ, তুই অকারণে কামমোহিত ক্রৌঞ্চকে রধ করিলি, অতএব এই পৃথিবীতে তুই কখনই প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পারিবি না।

     সেই শুভক্ষণ অবধি ভূভারতে কবিতার সৃষ্টি হইল। এ স্থলে গ্রন্থকার সরস্বতীর নিকট এই প্রার্থনা করিতেছেন, যে তিনি যেমন কামাসক্ত ক্রৌঞ্চের নিধনাবসরে বাল্মীকির রসনাগ্রে অধিষ্ঠিতা হইয়াছিলেন, তেমনি যেন এ গ্রন্থকারের প্রতিও সানুকম্পা হন। এই কাব্য খানির অনেক স্থল বাল্মীকিকৃত রামায়ণ অবলম্বন করিয়া রচিত হইয়াছে, এই হেতু কবি বাল্মীকীর ভারতীকে আরাধনা করিতেছেন। ক্রৌঞ্চবধূ সহ—অর্থাৎ ক্রৌঞ্চবধূ সহবাসী।

  1. ১.০ ১.১ ১.২ নরাধম আছিল ইত্যাদি—যে নরাধম যৌবনকালে দস্যুবৃত্তিরত ছিল (অর্থাৎ বাল্মীকি) সে এক্ষণে তোমার প্রসাদে অমর হইয়াছে।
  2. মৃত্যুঞ্জয়—অমর। মৃত্যুঞ্জয় উমাপতি—মহেশ্বর।
  3. ৩.০ ৩.১ রত্নাকর—কবিগুরু বাল্মীকির পূর্ব্ব নাম। রত্নাকর—সাগর।
  4. হায়, মা, ইত্যাদি—আমার এমন কি পুণ্য আছে যে কবিগুরু বাল্মীকির ন্যায় তোমার প্রসাদ লাভ করি?