পাতা:মেদিনীপুরের ইতিহাস প্রথম ভাগ.djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* :e মেদিনীপুরের ইতিহাস। রত্ন ভাণ্ডার স্বদেশে বহন করিয়া আনিত। তাম্রলিপ্তই তখন পূৰ্ব্বভারতের প্রধান বাণিজ্য-বন্দর ছিল । * এই বন্দরেই তখন বাণিজ্যপোত ও রণতরী-সমূহ নিৰ্ম্মিত হইত এবং এই বন্দর হইতেই বৃহৎ বৃহৎ অর্ণবযান-সমূহ মন্দ-পবনে কেতন উড়াইয়া যাত্রী ও পণ্যদ্রব্য লইয়া দেশবিদেশে যাতায়াত করিত। তখন অনন্ত নীল জলরাশি উত্তাল তরঙ্গ তুলিয়া সফেন উচ্ছ্বাসে তাম্রলিপ্তের পাদমূল ৰীেত করিয়া প্রবাহিত হইত আর সেই তরঙ্গে নাচিতে নাচিতে বাঙ্গালীর বাণিজ্যপোত কত দেশের রত্ন-ভাণ্ডার স্বদেশে বহন করিয়া আনিত । তাম্রলিপ্তের শ্রেষ্ঠ-সম্প্রদায় শত সৌধ চূড়ায় সে বিভবচ্ছটা বিকীর্ণ করিয়া বাঙ্গালীর পুরুষকার ঘোষণা করিত। কিন্তু এখন আর তাম্রলিপ্তের সে অনন্ত নীল জলরাশি নাই, সে বাণিজ্যপোত নাই,আর বাঙ্গালীর পোতারোহণের সে কলকলায়মান কোলাহলও নাই ! কালচক্রে সকলই পরিবর্তিত হইয়। গিয়াছে। বহু-সমৃদ্ধিশালী প্রাচীন তাম্রলিপ্ত নগর এক্ষণে একটি ক্ষুদ্র উপনগরে পরিণত হইয়াছে। ক্ষুদ্রকায় রূপনারায়ণ নদ অব্যক্ত ভাষায় কুলু-কুলু স্বরে সেই অতীত গৌরব-কাহিনী গাহিতে গাহিতে তমলুকের পাদমূল ধৌত করিয়া ধীরে ধীরে বহিয়া যাইতেছে। যে প্রাকৃতিক নিয়মের অনুবর্তী হইয়া জগদ্বিখ্যাত বাবিলন, ট্রয় প্রভৃতি উন্নতিশালী নগর সকল এক্ষণে নামমাত্রে পর্য্যবসিত হইয়াছে, যে সৰ্ব্বগ্রাসী কালের বশবর্তী হইয়া বিখ্যাত গৌড়, পাণ্ডুয়া প্রভৃতির গৌরব-স্বৰ্য্য অস্তাচলে চির-নিমগ্ন হইয়াছে, সেই অলঙ্ঘনীয় নিয়মের কঠোর হস্ত হইতে প্রাচীন তাম্রলিপ্ত-রাজ্যও অব্যাহতিলাভে সমর্থ হয় নাই।

  • * Indian Shipping, p. 161.