পাতা:মেদিনীপুরের ইতিহাস প্রথম ভাগ.djvu/২১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভৌমিক বিবরণ।

দীর্ঘতমা ঋষির ঔরসে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম নামে পাঁচ পুত্র জন্মগ্রহণ করেন, তাঁহারাই এই পঞ্চ-রাজ্যের সংস্থাপয়িতা।[১] স্বর্গীয় পণ্ডিত উমেশচন্দ্র বটব্যাল মহাশয়ের মতে দীর্ঘতমা ঋষি খৃঃ পূর্ব্ব ১৬৯০ অব্দে বর্ত্তমান ছিলেন।[২]

 বায়ু, বিষ্ণু, মৎস্য, মার্কণ্ডেয় প্রভৃতি পুরাণগুলিতেও এই পাঁচটি নাম একসঙ্গে দৃষ্ট হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌গণ প্রাচীন পু্ণ্ড্র, ও সুহ্ম রাজ্যের যে সীমানির্দ্দেশ করিয়াছেন, তাহাতে জানা যায় যে, এই দুইটি রাজ্য পূর্ব্বোক্ত অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ এই তিনটি রাজ্যের অংশবিশেষ লইয়াই গঠিত হইয়াছিল। উইলসন্, কানিংহাম প্রভৃতি পণ্ডিতগণের মতে বর্ত্তমান রাজসাহী বিভাগের পশ্চিমোত্তর-প্রদেশটিই অর্থাৎ প্রাচীন অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাংশই পরবর্ত্তিকালে পুণ্ড্র রাজ্য নামে অভিহিত হয় এবং কলিঙ্গ-রাজ্যের উত্তরপূর্বাংশ লইয়াই সুহ্ম-রাজ্য গঠিত হইয়াছিল। শ্রীযুক্ত বিজয়চন্দ্র মজুমদার মহাশয় বিস্তর প্রমাণাদির দ্বারা সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে, বর্ত্তমান মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশই প্রাচীন সুহ্ম-রাজ্যের অন্তর্গত ছিল এবং উক্ত জেলার অন্তর্গত প্রাচীন তাম্রলিপ্ত নগরটি সেই রাজ্যের রাজধানী বলিয়া পরিগণিত হইত। বর্দ্ধমান ও মেদিনীপুর জেলার পূর্ব্বসীমা ধরিয়া যে রেখাটি পাওয়া যায়, তাহারই পূর্ব্বভাগে বঙ্গরাজ্য এবং পশ্চিমে সুহ্মরাজ্য ছিল, ইহাই তাঁহার মতে নির্দ্দিষ্ট। সুহ্মরাজ্যের সীমা ঐ স্থান হইতে আরম্ভ হইয়া দক্ষিণে কলিঙ্গ-রাজ্য পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[৩] ইহা হইতে অনুমান করা যাইতে পারে যে, বর্ত্তমান বর্দ্ধমান বিভাগের প্রায় সমস্ত ভূভাগ সুহ্ম-রাজ্যের অন্তর্গত বলিয়া নির্দিষ্ট হইত।


  1. হরিবংশ—৩১ অধ্যায়।
  2. গৌড়ের ইতিহাস—রজনীকান্ত চক্রবর্ত্তী—২ পৃষ্ঠা।
  3. নব্যভারত পত্রিকা—অগ্রহায়ণ ১৩১৭—“বঙ্গের ভৌগোলিক বিবরণ।”