পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধনপৎ-কুমারী
৯৯

ধনপতির চো’কে দু ফোঁটা জল দেখা দিল। হাজার হোক, তাঁর স্ত্রী। ভাল শিক্ষা পেলে এতদূর দুর্গতি হতো না।

 কিছু দিন পরেই ধনপতি খুব ঘটা ক’রে বড় ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিলেন। কুটুম্ব ও লোকজনে বাড়ী ভরে গেল। সেই গেরস্ত বাড়ীর গিন্নির ও মেয়েছেলেদের খুব আগ্রহ ক’রে নিমন্ত্রণ করা হলো। সারা দিনরাত কেবল খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার। গাঁয়ের প্রাচীন লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, ধনপতি যা কল্লে এমন ঘটাঘটি তারা কখনো দেখে নাই, শোনেও নাই। কিন্তু এত আনন্দ কোলাহলের তিতরেও ধনপতির চো’কে জল। আজ তাঁর গুণবতী বড় গিন্নির কথা মনে পড়েছে!

 সওদাগরের মেয়েটীর নাম ধনপৎ-কুমারী। রাত বেশী হয়েছে, বাসর ঘরে এখন কেউ নাই। ধনপৎকুমারী ও তাঁর বর শ্রীমন্তকুমার নিদ্রার ভাণ করে শুয়ে আছেন, এখনো তাঁদের দু’জনে কথা হয়নি। শ্রীমন্ত বড় লাজুক, প্রথম কি বোলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এমনি সময়ে কুমারীর হঠাৎ নাটাই ব্রতের কথা মনে পড়ে গেল। সেদিন অগ্রহায়ণ মাসের শেষ রবিবার। যে ব্রতের পুণ্যিতে আমাদের এত হলো, আজ আমি সেই ব্রত ভুলে গেছি! এই ভেবে তিনি তাড়াতাড়ি উঠলেন। বরণের ডালায় পিটুলি, দুর্ব্বা ও ফুলের মালা ছিল। পিটুলি দিয়ে প্রদীপের শীষে চাপাটি তয়ের ক’রে নাটাই ঠাক্‌রুণের পূজো ও প্রণাম করলেন। শ্রীমন্তকুমার শুয়ে শুয়ে সব দেখছিলেন। প্রদীপের আলোয় মুখখানি ভাল করে দেখতে পেয়ে তিনি ভাবলেন, আহা কি সুন্দর মুখ! কি সুন্দর চো’ক! তিনি আবার ভাবলেন, এত রাত্তিরে পটুলি দিয়ে পুতুলখেলা কেন?