পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
নাটাই

জল উঠলল না। জলাশয় প্রতিষ্ঠা ক’রে পুণ্য সঞ্চয় করবেন, বহুদিনের আশা বিফল হলো। কি দারুণ পাপে এমন হলো ভাবতে ভাবতে বুড়ো সওদাগরের প্রায়ই ঘুম হতো না। পর অন্নপ্রাশনের আগের দিন রাত্রে তিনি যে স্বপ্ন দেখলেন, তাতে তাঁর প্রাণ যেন উড়ে গেল। স্বপ্ন দেখলেন, “যদি নরকের ভয় থাকে, তবে কাল অন্নপ্রাশনের পর নাতিকে কেটে পুকুরে ফেলবে, তা হ’লে জল উঠবে ও পরকালে তোমার অক্ষয় স্বর্গলাভ হবে।” এই দারুণ স্বপ্ন দেখে বুড়ো সওদাগরের চো’কের জলে বালিস ভিজে গেল। আজ তাঁর বাড়ীতে ক্রিয়া, অনেক বেলা হয়ে গেল তবু তিনি বিছানা হতে উঠছেন না। নহবৎ ও সানাই তাঁর কাণে বিষ ঢেলে দিতে লাগলো। তিনি বিছানায় ছটফট করতে লাগলেন। ব্যস্ত হয়ে শ্রীমন্ত বাপের কাছে গেলেন। অনেক কষ্টে সওদাগর মুখে তুলে বল্লেন, যে ভীষণ স্বপ্ন দেখেছি তা কারু কাছে বোলবার নয়, শোনবারও নয়। আমি ঘোর পাপী, আমার নরকে বাস হোক, সেই ভাল, আর এ মুখ কা’কেও দেখাবো না। তারপর তিনি ছেলেকে স্বপ্নের কথা গোপনে বল্লেন। চো’কের জলে তাঁর বুক ভেসে গেল।

 শ্রীমন্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। আজ তাঁর হরিষে বিষাদ! তখনি সামলিয়ে আবার উঠে দাঁড়ালেন। চো’কের জল মুছে বাপকে বল্লেন, বাবা আজ আমি ধন্য হলেম! নরকের ভয় থেকে উদ্ধারের জন্যেই লোকে পুত্র পৌত্র কামনা করে। আপনার পৌত্রকে দিয়ে আপনার অক্ষয় স্বর্গবাস হবে, এর চাইতে আমার আনন্দের কথা আর কি হতে পারে! আজ আমার পরম সৌভাগ্য! আমার জন্ম সার্থক হলো! দাতা-