পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধনপৎ-কুমারী।
১০৩

কর্ণের পুণ্যের কথা স্মরণ করুন। আপনি আর খেদ করবেন না, আপনার আশীর্ব্বাদে আমার আরো পুত্রলাভ হতে পারবে। আপনার স্বর্গ কামনা করে আজ আমি এই শিশু উৎসর্গ করবো। আপনি উঠুন, আপনার চো’কে জল দেখলে আমার অধর্ম্ম হবে। এই ব’লে শ্রীমন্ত বাপের পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে অন্নপ্রাশনের পর পুষ্করিণী উৎসর্গের জন্যে প্রস্তুত হ’তে চল্লেন।

 শ্রীমন্ত ভাবলেন, এ কথা স্ত্রীকে বলে কাজ নেই। হাজার হোক, মায়ের প্রাণ। এ সংবাদ শুনে তিনি হাহাকার করে উঠবেন, আর আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা হবে না। অন্নপ্রাশন হয়ে গেল পর তিনি ছেলেকে কোলে নিয়ে গোপনে পুকুর পাড়ে গেলেন। শ্রীহরির পাদপদ্মে শিশুকে মনে মনে নিবেদন করে, সাহসে বুক বেঁধে, পিতার স্বর্গকামনায় শিশুকে দুখণ্ড ক’রে কেটে পুকুরে ফেলে দিলেন। অমনি এক নিমেষে পুকুরে জল উঠে ভ’রে গেল। [এই সময় কথক ঠাকুরাণী আলিপনার মধ্যস্থিত “পুকুরে” একটা ফুল ছিঁড়িয়া ফেলিয়া উহা জলপূর্ণ করিয়া থাকেন। অন্য রমণীরা হুলুধ্বনি করেন।] পুকুরে হঠাৎ জল উঠেছে শু’নে গ্রামের লোকদের আনন্দের সীমা নাই। তখনি পুরুৎ ডেকে পূজো করে পুকুরের প্রতিষ্ঠা করা হলো।

 ধনপৎকুমারী সারাদিন রান্নাঘরে ছিলেন। অনেকক্ষণ শিশুকে না দেখে তাঁর মন চঞ্চল হয়ে উঠলো। তিনি দাসীদের বল্লেন, দুধ উঠে আমার বুক ভেসে যাচ্ছে, আমার ছেলে এনে দাও। তখন কেউ বল্লে ছেলেকে সে বাপের কোলে দেখেছে। কেউ বল্লে, ছেলে তার খুড়োর কাছে; আবার কেউ বল্লে ছেলে তাঁর ঠাকুর্দার কোলে ঘুমুচ্ছে।