পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বউমার শিক্ষা
১০৭

সগবগিয়ে উঠতো; লুকিয়ে নৈবেদ্যের আগ খেয়ে ফেলতেন। শাশুরী টের পেলে, বিড়ালে খেয়েছে ব’লে বুঝিয়ে দিতেন। জিভের দোষ তাঁর কিছুতেই গেল না। এজন্যে তাঁর উপোস করা হতো না, ব্রতের ফলও হতো না। এদিকে ষষ্ঠী ঠাকরুণ তাঁর বাহন বিড়ালের উপর মিছে বদনাম শুনে কুপিত হলেন। ফলে, বৌয়ের ভাল হলো না। তাঁর সন্তান হয়ে বাঁচতো না। মাদুলি তাবিজ কবচ সবই বৃথা হলো।

 অগ্রহায়ণ (অথবা পৌষ) মাস, কাল বাড়ীতে পাটাই ব্রত। ব্রাহ্মণীর রাত্রে ঘুম হলো না। তিনি অনেক ভেবে চিন্তে স্থির করিলেন, বউকে কোন কাজে আটকে রাখবো যাতে সে সারাদিন উপোস ক’রে থাকে, আর ঘরে ব্রতের আয়োজন টের না পায়। এই ভেবে ঘরে যত ময়লা কাপড় ছিল তাতে তিনি তেল ও কালী মেখে রাখলেন। ভোরে উঠে বউকে বল্লেন, বউ, এ কাপড়গুলি ধোপাবাড়ী পাঠিয়ে কাজ নেই, তুমি এগুলো পুকুর থেকে বেশ ক’রে ধুয়ে নিয়ে এসো। কাপড় কাচা শেষ না হলে বাড়ী ফিরিও না। বউ চলে গেলে পরে ব্রাহ্মণী তাড়াতাড়ি রান্না বান্না ও পিটে পায়েস তয়ের করে ব্রতের আয়োজন করতে লাগলেন।

 এদিকে বউ পুকুর ঘাটে সারাদিন খেটে তেল কালীর দাগ কিছুতেই উঠাতে পারলেন না। খিদেয় তাঁর প্রাণ যেন বেরিয়ে যেতে লাগলো। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়েছে। পাড়ার গেরস্ত মেয়েদের উলু (কেহ ‘জয়কার’ বা ‘জোকার’ শব্দ ব্যবহার করেন) শুনতে পেয়ে তাঁর হঠাৎ মনে পড়লো, ওই যাঃ! আজ তো পাটাই ব্রত; ঘরে কত পিটে পায়েস হয়েছে, তা ফেলে